• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১১ সেকেন্ড পূর্বে
সাহিদুজ্জামান সাহিদ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১০:০২ রাত

মানিকগঞ্জে বসতবাড়ি ও কৃষি জমির মাটি কেটে রাস্তা ভরাট

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় কালাচাঁদপুর-শিবপুর থেকে ঘিওর বড়টিয়া পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার (এক হাজার ৫০০ মিটার) সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সড়কের দুপাশের কৃষি জমি ও স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) প্রায় ১৫টি পরিবারের বসতভিটা থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হয়েছে। মাটি দিতে না পারলে অনেকের কাছ থেকে টাকাও নেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা, ক্ষুব্ধ ও অসহায় হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ঠিকাদারের লোকজনকে মৌখিকভাবে বসতভিটার মাটি না কাটতে অনুরোধ করা হলেও তারা তা শোনেননি। বরং ভয়ভীতি ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির প্রভাব বিস্তারের কারণে ভুক্তভোগীদের বাড়ির সামনে থেকে গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে। একই সময়ে ছোট-বড় আকারের অনেক গাছও কেটে ফেলা হয়।

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঘিওর উপজেলার তত্ত্বাবধানে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলার দোতরা থেকে কালাচাঁদপুর-শিবপুর হয়ে ঘিওর বড়টিয়া পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার (এক হাজার ৫০০ মিটার) সড়কটির উন্নয়নের কাজটি পায় রাকা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেটির স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ। জিডিপি-৩/এমএ-১২৪ প্যাকেজে এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার ৬১০ টাকা। তবে শতকরা ৫ ভাগ কমিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা। ২০২৪ সালের ১১ জুন সড়কটির উন্নয়নের কাজ শুরু হয়, আর কাজটি শেষ হবে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বরে। এ পর্যন্ত সড়কটির কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ।

জানা গেছে, রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজন জোরপূর্বক এলাকার মানুষের কৃষি জমি এবং বসতভিটা থেকে মাটি কেটে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা বাধা দিলেও কাজ হয়নি। উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে দমিয়ে রেখেছে ঠিকাদারের লোকজন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এমন রাকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদের লাইসেন্স দিয়ে কাজটি করছেন বিএনপিপন্থি তৌহিদুজ্জামান বাবু নামের এক ব্যক্তি। তিনি রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ দেন ঘিওর উপজেলা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কাওসার ও ঘিওর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এবং ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কৃষক দলের আহ্বায়ক সেলিমকে। তাদের লোকজন কালাচাঁদপুর পালপাড়ার রামচরণ, আশিষ পাল, রমন পাল, চিত্তরঞ্জন পাল, মঙ্গল পাল, সাধন পাল, নিতাই পালসহ আরও অনেকের বসতবাড়ির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলে। এতে তাদের বসতভিটা, টয়লেট, গোসলখানা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনকি অনেকের বাড়ির প্রবেশের জায়গাও কেটে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় গৃহবধূ সাথী আক্তার বলেন, "আমাদের এই রাস্তার অনেক দরকার, কিন্তু রাস্তার জন্য মাটি দিতে না পারলে তারা (ঠিকাদারের লোকজন) আমাদের কাছ থেকে টাকা নিবে। এটা কেমন কথা? সরকারি টাকায় রাস্তার কাজ হচ্ছে। মাটি দিতে পারিনি বলে আমার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে তারা।"

ভুক্তভোগী নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, "এই রাস্তার জন্য আমি কয়েকবার নিজের জায়গা থেকে মাটি দিয়েছি। কোনো টাকা পয়সা নেইনি। জোর করে ওরা (ঠিকাদারের লোকজন) মাটি কেটে নিয়েছে, অনেক বড় গর্ত করেছে। যে কোনো সময় আমার বাবার শ্মশান (কবর) ধসে পড়ে যাবে। মাটিও নিয়েছে, এখন আবার ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে। গর্তগুলো ভরাট করতে এখন আমার ৩ লাখ টাকার মাটি লাগবে। আমি এই টাকা কীভাবে জোগাড় করব, কে দেবে আমার এই ক্ষতিপূরণ। আমরা হিন্দু মানুষ তাদের কিছু বলার সাহস পাই না।"

সাবেক ইউপি সদস্য কালিমুদ্দিন (৬৫) বলেন, "আমার কৃষি জমিতে পেঁপে বাগান করেছি, সেখান থেকে জোর করে মাটি কেটে নিয়েছে। শুনেছি, কাওসার, সেলিম তাদের লোকজন দিয়ে মানুষের বসতবাড়ি ও কৃষি জমির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলছে। বাধা দিয়েছিলাম তারা শোনেনি, উল্টো বলে, মাটি কাটবই, আপনার যা পারেন করেন গিয়ে।"

অভিযোগ অস্বীকার করে ঘিওর সদর ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কাওসার বলেন, "আমি মাটি কাটার কাজ পাইনি। ওই রাস্তার দুপাশ থেকে মাটি ধরা রয়েছে। কাঁচা রাস্তাটি পাকা হলে আমাদের জমির দাম অনেক বেড়ে যাবে। ওখানে আমারও জমি আছে, সেখান থেকেও মাটি কাটা হয়েছে। আর বর্তমানে যে কাজটি করছে, তৌহিদ আমার বন্ধু, সেও বিএনপির রাজনীতি করে। তবে তার দলীয় কোনো পদপদবি নেই।" ভুক্তভোগীরা যে অভিযোগ করেছে, তা মিথ্যা দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে রাকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, "আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি করছেন তৌহিদ বাবু নামের এক ব্যক্তি। রাস্তার কাজের বিষয়ে আমি কোনো নিয়মনীতি বা নির্দেশনা কিছুই জানি না।" "আপনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন কি না?" জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি কোনো রাজনীতি করিনি। ব্যবসায়ী মানুষ ব্যবসা করেই চলি।" "কিন্তু আপনার লাইসেন্স ব্যবহার করে কেউ কাজটি করতে পারে কি না?" জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তৌহিদ বাবু আমার লাইসেন্স দিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছিল। ওর লাইসেন্সে এই কাজটি হয়তো পাওয়া যাবে না এমন ভেবেই এটা করেছিল। তৌহিদ বিএনপির রাজনীতি করে, শহরেই বাড়ি। আপনি তার নাম্বার নিয়ে কথা বলতে পারেন।"

এ বিষয়ে এলজিইডির ঘিওর উপজেলার প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান বলেন, "বিষয়টি আমরা জানার পরই ঠিকাদারকে নোটিশ করেছি। তার পক্ষের লোক তৌহিদুজ্জামান বাবু সেই নোটিশের কপি নিয়ে গেছেন। ঠিকাদারকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, ভুক্তভোগীদের জায়গা ভরাট করে দিতে। নির্দেশনা না মানলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।"

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]