
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রার্থী অপহরণ মামলার অভিযুক্ত আসামি মোহাম্মদ রাফিকে হলের কক্ষ থেকে বের করার চেষ্টা করলে সহপাঠীদের বাধার মুখে পড়েন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত থাকা দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা ও বিডি২৪লাইভ-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে হেনস্তা করেন অভিযুক্ত রাফির সহপাঠীরা।
বুধবার (১৩ই আগস্ট) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থানরত রাফিকে কক্ষ থেকে বের করার উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বাধা দেন অভিযুক্ত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মী রাফির সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি হলের একটি দেওয়ালে ছাত্রলীগের স্লোগান "জয় বাংলা" লেখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে চলা ছাত্রলীগের পেজ থেকে অস্ত্রের ভিডিও করে হুমকি দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়ে পেজে আপলোড দেওয়া, সাংবাদিকদের হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নজরে আসে শিক্ষার্থীদের। পরে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগ কর্মীকে বের করতে যান জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ সময় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বিতর্কিত মন্তব্য করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। ঐ সাংবাদিক তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা করেন তারা।
এ ঘটনাকে ছাত্রলীগ কর্মীদের শেল্টার দেওয়া উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই বিপ্লব মঞ্চের সভাপতি মো. তপু ইসলাম বলেন, "ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ 'জয় বাংলা' স্লোগান লিখেছে। আজকে তারা লিখছে আগামীকালকে তারা রাস্তা ব্লক করে স্লোগান দেবে এবং ক্যাম্পাসের গেট আটকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হবে কিন্তু আমরা তো এটা হতে দিতে পারি না। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় তারা তাদের কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে তাদেরকে রুখে দেওয়ার জন্য আমরা জুলাই বিপ্লব মঞ্চ সংগঠনটি তৈরি করেছি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শেল্টার দেওয়ার চেষ্টা করছে, আজকে অভিযুক্ত রাফিকে হল থেকে বের করতে আসলে তার সহপাঠীরা তাকে রক্ষা করে, এমনকি আমাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে তাদেরকে রক্ষা করে। কেউ নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের রক্ষা করতে আসলে আমরা তাদেরকে রুখে দেব। আমাদের ভাইদের রক্তে অর্জিত জুলাইকে আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করব। আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মূলা ঝুলানো বক্তব্য না দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।"
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এ এম ফরহাদ বলেন, "আজ যে ঘটনা হয়েছে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ওই রুমে রাফি বাদেও পিইএসএস বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরাও ছিল। যে কারণে বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীরা যায় এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলে যে এই রুমে অন্য শিক্ষার্থীরা আছে সুতরাং আপনারা প্রশাসনকে ডাকেন এবং তাদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা কোনো কথা শুনতে রাজি হয় না। বরং বলে আমরা তাকে শেল্টার দিচ্ছি। এই ভাবেই উস্কানিমূলক কথার পর্যায়ে একটা ঝামেলার সৃষ্টি হয়।"
হেনস্তার শিকার হওয়া দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানান, "আমি ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তখন ছাত্রলীগ কর্মীর সহপাঠীরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বিতর্কিত মন্তব্য করে। তখন আমি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে হেনস্তা করে।"
যবিপ্রবি শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. মজনুজ্জামান বলেন, "গতকাল কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী হলের কিছু জায়গায় জয়বাংলা, ইউনূস হটাও ইত্যাদি স্লোগান লিখে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে। এই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এক ছাত্রলীগ কর্মীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জানা যায় শনাক্তকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অতীতে ছাত্রলীগের সঙ্গে মিশে চাকরিপ্রার্থী অপহরণসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবিতে তার রুমে যায়। সেখানে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর পক্ষে সহাবস্থান নিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু হয়। এটা শুনে আমি এবং প্রক্টর স্যার সেখানে ছুটে যাই। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগের প্রমাণের প্রেক্ষিতে সেই ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর