• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫৮ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:৫৮ সকাল

পুলিশি পাহারায় মাকে শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখলেন মেয়ে

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কারাগারের লোহার ফটক খুলে যখন কক্সবাজারের সাবেক নারী কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখিকে বের করা হলো, তখন দুপুরের রোদ মাথায় পড়লেও তার চোখ ভিজে ছিল কান্নায়। পুলিশি পাহারায় গাড়ি ছুটছিল রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের দিকে। চারপাশের সবুজ মাঠ, ধানগাছের দোল, পথের ধুলো- সবই যেন আজ অচেনা। তার মন ছুটে চলছিল একটাই জায়গায়- মায়ের কাছে।

বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই ভিড় সরিয়ে চোখে পড়ল সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়া মায়ের নিথর দেহ। পাখি ছুটে গিয়ে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দিলেন। ঠান্ডা হাত দু’টি শক্ত করে ধরে কেঁদে বলতে লাগলেন, ‘মা, আমি এসেছি… তুমি তো আমাকে ডাকছিলে।’ স্বজনরা চোখ মুছছিলেন, কেউ কাঁধে হাত রাখছিলেন, কিন্তু তার কান্না থামছিল না।

তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিলেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক নারী কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি। বুধবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুক্ত আকাশের নিচে থাকার সুযোগ পেলেও, সেই মুহূর্তগুলো কাটল কান্না আর শোকের আবহে। মায়ের কবরের মাটি ভিজল মেয়ের অশ্রুতে, আর মেয়েকে বিদায় জানাতে গিয়ে ভিজল স্বজনদের চোখ। দাফন শেষে আবারও তাকে ফিরতে হয়েছে কারাগারের চার দেওয়ালের ভেতরে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টার দিকে কক্সবাজার শহরের একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পাখির মা ফাতেমা বেগম (৭৫)।

অনেকে বলছেন, মেয়ের কারাবন্দি হওয়ার পর থেকেই শাহেনা আক্তার পাখির জন্য মা ফাতেমা বেগমের মন ভেঙে পড়েছিল। শারীরিক শাস্তি নয়, বরং মানসিক কষ্ট- মায়ের শারীরিক দুর্বলতা, মেয়ের প্রতি উদ্বেগ, আর নিরপরাধ মেয়ের বন্দি জীবনের চাপ- সব মিলিয়ে তার হৃদয় ধীরে ধীরে ফেটে যাচ্ছিল। কেউ কেউ বলছেন, সেই ভাঙা মন আর সহ্য অযোগ্য কষ্টই শেষ অবধি তাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে বাধ্য করেছিল। লোহার দরজা যত কঠোরই হোক, তার চোখের অশ্রু ও হৃদয়ের ব্যথা কোনো শিকলের ভেতরে আটকানো সম্ভব হয়নি।

মায়ের মৃত্যুসংবাদ কারাগারে পৌঁছাতেই শোকে ভেঙে পড়েন শাহেনা আক্তার পাখি। স্বজনরা জেলা প্রশাসনের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন। অনুমতি মেলায় দুপুরে পুলিশি পাহারায় তিনি রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধেঁছুয়াপালং গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছান।

গ্রামের উঠোনে ঢুকেই পাখি ছুটে যান মায়ের লাশের কাছে। সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়া মায়ের মুখ দেখে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। বারবার মায়ের মুখে হাত বুলিয়ে বলেন- ‘মা, আমি এসেছি… তুমি তো আমাকে এতদিন ডাকলে।’

পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন পাখির বাবা খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গনি। কান্না জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘পাখি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার মা টেনশনে ছিলেন। সারাক্ষণ ‘পাখি, পাখি’ বলে ডাকতেন। হয়তো এই কষ্টই তার বুক ভেঙে দিয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আবেগঘন স্ট্যাটাস ও প্রতিক্রিয়া এসেছে। কেউ পাখির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন, কেউ আবার অভিযোগ বা সমালোচনা করেছেন।

কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক ও সাবেক জনপ্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ব্যক্তিগত ফেইসবুকে লিখেছেন, পৌর কাউন্সিলর সাহেনা আক্তার পাখির কি এমন কোনো অপরাধ ছিল যা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে? চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, খুন, দস্যুতা বা অন্য কোনো জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি তিনি? না, বরং তিনি ছিলেন সহজসরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, মানবিক, পরোপকারী ও জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি।

মেয়ের কারাবন্দি হওয়ার পর থেকেই শয্যাশায়ী ছিলেন তার মা। মায়ের হৃদয় সেই কষ্ট সহ্য করতে পারেনি। আজ মায়ের শেষ যাত্রায় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শেষবারের মতো মাকে দেখতে এসেছিলেন পাখি। কিন্তু শুধু তিনি নয়, তার বুকফাটা আহাজারিতে কেঁদেছেন সবাই।

রাসেল চৌধুরী আরও লিখেছেন, দলবাজি, সন্ত্রাস ও জুলুমকারীদের শাস্তি দিন, কিন্তু নিরপরাধ মানুষের প্রতি এতো অবিবেচক হবেন না।

তিনি যোগ করেন, পাখি তার ক্লাসফ্রেন্ড এবং খুনিয়াপালংয়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার ৬২ নম্বর আসামি শাহেনা আক্তার পাখি। গত ৩১ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার পর কারাগারে পাঠানো হয়।

বিকেল গড়াতেই জানাজা শেষে মায়ের দাফন সম্পন্ন হয় গ্রামের কবরস্থানে। বিদায়ের সময় আবারও ভেঙে পড়েন পাখি। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো প্রার্থনা করেন, আল্লাহ, মাকে জান্নাত নসিব করো, আর আমাকে ধৈর্য দাও।

ঠিক বিকেল ৪টার আগে, পুলিশের কড়া পাহারায় আবারও তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। কয়েক ঘণ্টার সেই অস্থায়ী মুক্তি শেষ হয় লোহার দরজার আড়ালে। কিন্তু গ্রামের আকাশে তখনও ভাসছিল এক মেয়ের হৃদয়বিদারক কান্নার প্রতিধ্বনি।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]