
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুদ্রগ্রাম-নবীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশায় দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে নবীগঞ্জ শহরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশজুড়ে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এক বছর আগে ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় সড়কটির এমন দশা হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির আইনাগাঁও, ভরপুর, চৌধুরী বাজার, বাউসা বাজার, বাউসা পয়েন্ট, বাউসা মাদ্রাসা পয়েন্ট, নাদামপুর মাদ্রাসা পয়েন্ট, রিফাতপুর, শিবপাশাসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে ভরে গেছে। এই সড়কটি দেখলে গ্রামের মেঠোপথ বলে মনে হয়। এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বিগত সরকারের শেষ সময়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকার সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মাথায় ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে সড়কের কোথাও পিচ ঢালা পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। নিম্নমানের কাজের জন্যই এই বিপুল অঙ্কের টাকা জলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়ক ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করেছিল হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ মিজানুর রহমান শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান বিল্ডার্স। নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কটি ভেঙে যায়।
এই সড়কটি উপজেলার পানিউমদা, গজনাইপুর, দেবপাড়া ও বাউসা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের প্রধান পথ। শাহ তাজ উদ্দিন কুরেশী (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়, ধুলচাতল তাজিয়া মোবাশ্বীরিয়া আলিম মাদ্রাসা, দিনারপুর কলেজ, দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দিনারপুর দাখিল মাদ্রাসা, পানিউমদা রাগীব-রাবেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বহু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি চাকরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। একমাত্র বাইপাস সড়ক হওয়ায় ট্রাক, ট্রাক্টর, অটোভ্যান, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস নিয়মিত চলাচল করতো। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে যান চলাচল কমে গেছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নবীগঞ্জের বাশডর গ্রামের সিএনজি চালক রমজান আলী বলেন, "একদিন গাড়ি চালালে তিনদিন যায় গায়ে ব্যাথা, প্যারাসিটাল খেতে হয় রাতে"। তিনি দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। নবীগঞ্জ দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় জানান, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়ক সংস্কারের একমাস পর থেকেই ভাঙতে শুরু করে, যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাউসা গ্রামের মনসুর মিয়াও দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, ভাঙা সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে কয়েকদিন পরপর অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যায়। লাল সবুজ যুব সংঘের সভাপতি হুমায়ুন কবির আজিম জানান, তারা ইউএনও-র কাছে অভিযোগ করলেও এখনও সংস্কার হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী সাব্বির আহমদ জানান, নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম সড়ক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঢাকায় প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত কাজ শুরু করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর