
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ ঘিরে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। নানা জোট, প্যানেল ও পরিচিত মুখের ভিড়ে এবার স্বতন্ত্র ভিপি (সহসভাপতি) পদপ্রার্থী হিসেবে আলাদা আলোচনায় উঠে এসেছেন জুলিয়াস সিজার তালুকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সংকটে পাশে দাঁড়ানোর কারণে তিনি ইতোমধ্যেই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের প্রার্থিতা, অতীত রাজনীতি, বিতর্ক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন জুলিয়াস। তাঁর মতে, ডাকসু হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের সার্বজনীন প্ল্যাটফর্ম, কোনো রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র নয়। তিনি বলেন, “ডাকসু হলো সার্বজনীন— পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের, কোনো বিশেষ দলের নয়। আমি চাই শিক্ষার্থীদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে, দলীয় আনুগত্যে নয়। ভিপি পদটি নীতি ও নেতৃত্বের আসন, আর শিক্ষার্থীরা আজ একজন প্রতিনিধি নয়, একজন কণ্ঠস্বর খুঁজছে। আমি সেটিই হতে চাই।”
তাঁর মনোনয়ন ঘিরে শুরু হওয়া সমালোচনার বিষয়ে জুলিয়াসের বক্তব্য, “বাংলাদেশে বিকল্প কণ্ঠ তুললেই অভিযোগ আসে। আমাকেও সেই রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি সমালোচনা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু প্রার্থিতা বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।”
সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ হলো তাঁর ছাত্রলীগের সঙ্গে পূর্ববর্তী সম্পৃক্ততা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি ছাত্রলীগে ছিলাম। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ থেকেই যোগ দিয়েছিলাম। তবে ২০২০ সালেই সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসেছি। নির্যাতনের অভিযোগ রাজনৈতিক অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়। গত পাঁচ বছর আমি সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে থেকেছি। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে আমি থামব না।”
কেন শিক্ষার্থীরা তাঁকে ভোট দেবেন— এমন প্রশ্নে জুলিয়াস বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাকে চিনে কাজের জন্য। গত পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের মাধ্যমে আমি ৭০০-র বেশি জটিল কেস সমাধান করেছি। বিভিন্ন উদ্যোগে উপকৃত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।” তিনি জানান, সার্টিফিকেট ও মার্কশিট উত্তোলন সহজীকরণ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালে পরিবহন ফি আদায়ের বিরোধিতা, বিবাহিত নারী শিক্ষার্থীদের হল সিট সংরক্ষণ, বন্ধ হওয়া ব্যাংক বৃত্তি পুনরায় চালু, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা আদায় এবং ‘মেধাবীর মিল’ ও ‘মেধাবীর দ্রুতি’ কর্মসূচির মাধ্যমে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জুলিয়াস বলেন, নির্বাচিত হলে তাঁর প্রথম কাজ হবে ক্যাম্পাসকে দলীয় আধিপত্যমুক্ত করা। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্রাম লাউঞ্জ, জেলা শহর পর্যন্ত নিয়মিত বাস সার্ভিস, রাত ৮টা পর্যন্ত বাস চলাচল, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ, উন্নতমানের মেনুতে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষতাভিত্তিক ক্যারিয়ার সেন্টার গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পাশাপাশি বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য ফ্রি সাপোর্ট সেন্টার ও মেডিকেল সেন্টারে সুলভ মূল্যে ওষুধ সরবরাহের পরিকল্পনার কথাও জানান।
জরুরি সমস্যার সমাধানে ‘পাওয়ার ডায়াল’ নামে কল-ভিত্তিক সেবা এবং দেশের নামকরা হাসপাতালে ডিসকাউন্ট সুবিধাসহ ‘পাওয়ার কার্ড’ চালুর ঘোষণা দেন তিনি। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা টাস্কফোর্স, যৌন হয়রানির দ্রুত বিচার সেল এবং নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে স্কলারশিপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রতিশ্রুতিও দেন জুলিয়াস।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন নানা জোটভিত্তিক রাজনীতি সামনে আসছে, তখন জুলিয়াস সিজার তালুকদারের অবস্থান শিক্ষার্থীদের কাছে বিকল্প কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা— “ডাকসু হবে শিক্ষার্থীদের, কোনো দলের নয়।”
এখন দেখার বিষয়, ভোটের মাঠে শিক্ষার্থীরা কতটা আস্থা রাখেন তাঁর এই প্রতিশ্রুতিতে।
সর্বশেষ খবর