
সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কটি দিন দিন যেন এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। সিলেট ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের এই প্রধান মাধ্যমটি ব্যবহার করে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে আটটির মানুষ। গত ছয় মাসে এই সড়কেই ৪১ জন নারী ও পুরুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে জেলাবাসী। পরিবারের সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর স্বজনরা। আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি এক লেনের সরু হওয়ায় প্রায়ই বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। স্থানীয়দের মতে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং অদক্ষ চালকরাই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ আগস্ট সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের বাহাদুরপুর নামক স্থানে বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশি এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী নিহত হন। এছাড়াও সিএনজিতে থাকা আরও এক যাত্রীও প্রাণ হারান। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরপরই সুনামগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাস চালককে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
আঞ্চলিক মহাসড়কে বাসের চেয়ে সিএনজি অটোরিকশার চলাচল বেশি, এবং অধিকাংশ দুর্ঘটনাই সিএনজি অটোরিকশাকে কেন্দ্র করে ঘটছে। জেলার সচেতন মহল শাকিব মাহমুদের মতো অনেকেই ফিটনেসবিহীন বাস ও অদক্ষ চালকদের গাফিলতিকেই দুর্ঘটনার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।
জানা গেছে, জেলায় প্রায় ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে মাত্র সাড়ে চার হাজারের নিবন্ধন রয়েছে। বাকিগুলো নিবন্ধনহীন অবস্থায় চলাচল করছে। অপরদিকে, সুনামগঞ্জ জেলায় চলাচলকারী প্রায় এক হাজার বাসের অধিকাংশেরই ফিটনেস নেই। সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
অনেক সিএনজি চালকই স্বীকার করেছেন যে, এক যুগ ধরে গাড়ি চালালেও তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। নাদিম আহমেদ, ফারুক মিয়ার মতো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন যে, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন বাস চালকদের কারণে এই সড়কটি নিরাপদ নয়।
বাহাদুরপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জহির মিয়া, শফিক মিয়াসহ অনেকেই মনে করেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কটিকে এক লেন থেকে দুই লেনে উন্নীত করা গেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কিছুটা হলেও কমে আসবে।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শেখ আব্দুল লতিফ বলেন, চালকরা মাদকাসক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সড়ক নিরাপদ রাখতে আইন প্রয়োগ করলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ-এর সহকারী পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, যেসব চালক হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যান চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাফিক অফিস পরিদর্শক মো. হানিফ মিয়া জানিয়েছেন, চালকের অদক্ষতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর