
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দরিদ্র কৃষক মো. সহেল রানা তাঁর জীবিকার একমাত্র ভরসা একটি গাভী হারিয়ে পথে বসার শঙ্কায় পড়েছেন। অভিযোগ, প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের দেওয়া ঘাসে বিষ মেশানো ছিল, যার ফলে তাঁর গাভীটির প্রাণ গেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সহেল রানার বাড়ি উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দোবিলা গ্রামে। ৪৩ বছর বয়সী এই কৃষক দিনমজুরির পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে অন্যের জমি লিজ নিয়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করতেন। প্রতিবছর নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা ভাড়াও দিতেন নিয়মিত। গত ১৯ আগস্ট দুপুরে তাঁর লাগানো ঘাস কাটার পর থেকে বিপত্তি শুরু হয়। সেদিন সন্ধ্যায় সহেল রানার গাভীর পেট ফেঁপে ওঠে এবং দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিন দিন চিকিৎসার পর ২২ আগস্ট বিকেলে গাভীটি মারা যায়।
কৃষক জানান, গাভীটি চার মাসের গর্ভবতী ছিল। তাই তিনি শুধু গাভীই নয়, ভবিষ্যতের বাছুরটিও হারিয়েছেন। এতে তাঁর প্রায় দেড় লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সহেল রানা বলেন, “আমি তো একেবারে গরিব মানুষ। সংসারে আয়-রোজগারের ভরসা ছিল এই গাভীটিই। এখন একেবারে পথে বসে গেছি। আসামিপক্ষ অনেক বড়লোক, তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমি কি সঠিক বিচার পাব?”
২২ আগস্ট শুক্রবার রাতেই তিনি বাগাতিপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উপজেলার দোবিলা এলাকার আজিজ মন্ডলের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা, মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মোহাইমিনুল হক মিঠু এবং কৈপুকুরিয়া এলাকার বাহার উদ্দিন বারুর ছেলে লুৎফর আলীকে অভিযুক্ত করেছেন। সহেল রানার অভিযোগ, এঁদের হুকুমে তাঁর লাগানো নেপিয়ার ঘাসে ঘাসমারা ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। সেই বিষাক্ত ঘাস খেয়েই তাঁর গাভী মারা গেছে।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।” অন্যদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু হায়দার বলেন, “গরুটির ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে কী কারণে গরুটির মৃত্যু হয়েছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেরুন্নেসা নিজেকে জেলা জজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিককে বলেন, “পুলিশ এসেছিল, আপনারা পুলিশের থেকে জেনে নেন ঘটনা কী। আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।” অভিযুক্ত মোহাইমিনুল হক মিঠুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। অভিযুক্ত লুৎফর আলী বলেন, “জমির মালিক মেহেরুন্নেসা সম্পর্কে আমার বিয়ান। তিনি আমাকে বলেন কাজের লোক ঠিক করে দিতে জমিতে ঘাসমারা বিষ দেওয়ার জন্য। পরে আমি লোক ঠিক করে দিয়েছি এবং তারা গিয়ে জমিতে বিষ দিয়েছে, আমি এতটুকুই জানি।”
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, “জমিতে বিষপ্রয়োগ করায় এবং সেই জমির ঘাস খেয়ে গরুটি মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, গরুর মালিক সহেল খুব দরিদ্র মানুষ। গরুটি মারা যাওয়ায় সে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হলো।”
এদিকে স্থানীয়ভাবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, নাটোরে এর আগে কখনো গরুর ময়নাতদন্ত হয়েছে কি না। কৃষক সমাজের একাংশ বলছে, গরুর ময়নাতদন্ত বিষয়টি সচরাচর শোনা যায় না। তাই এবার প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই পদক্ষেপ আলোচনায় এসেছে। আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের রিপোর্ট মামলার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কারও দায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা যাবে না।
সহেল রানার এখন কেবলই আফসোস, “যা গেল তা আর ফেরত পাব না। আমার ক্ষতি পূরণের কেউ নেই। এখন শুধু চাই, অন্যায়টা যেন বিচার পায়।”
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর