পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান তিনটি সংসদীয় আসনকে আটটিতে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। নির্বাচন কমিশনের শুনানি শেষে তারা সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে এই দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, দেশের এক-দশমাংশ আয়তন নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মোট আয়তন ১৩,২৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। এত বিশাল এলাকা ও জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ৩টি সংসদীয় আসন থাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জন সংসদ সদস্যের পক্ষে ২৬টি উপজেলার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা কষ্টসাধ্য।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি পার্বত্য জেলার আয়তন ৬,১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার এবং উপজেলার সংখ্যা ১০টি। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ৬,৪৭,৫৮৭ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিল ৪,১৮,২১৫ জন। এত বিশাল আয়তনের জেলায় মাত্র ১ জন এমপি। অনুরূপ পরিস্থিতি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাতেও বিদ্যমান।
খাগড়াছড়ি জেলার আয়তন ২,৬৯৯.৫৬ বর্গকিলোমিটার এবং উপজেলার সংখ্যা ৯টি। জনসংখ্যা ৭,১৪,১১৯ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪,৪১,৭৪৩ জন।
বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭৯.০৪ বর্গকিলোমিটার এবং উপজেলার সংখ্যা ৭টি। জনসংখ্যা ৪,৮১,১০৯ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২,৪৬,৬৫৩ জন।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশাল আয়তনের জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে সম্ভব নয় এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে সঠিক বার্তা পৌঁছানোও সম্ভব নয়। আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দাবির প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের ও বিশাল জনগোষ্ঠীর পক্ষে এই দাবি উপস্থাপন করা হলো।
তারা খাগড়াছড়িতে ১টি সংসদীয় আসন থেকে ২টিতে, রাঙামাটিতে ১টি সংসদীয় আসন থেকে ৩টিতে এবং বান্দরবানে ১টি সংসদীয় আসন থেকে ২টিতে উন্নীত করার দাবি জানান।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য অঞ্চলের পরিসংখ্যানের থেকেও কম আয়তন, জনসংখ্যা ও ভোটার নিয়েই ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন, যেখানে ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ১,৭৮,৭৮৫ জন, যা বান্দরবানের চেয়েও অনেক কম। এছাড়া ঢাকা-৪ আসন, খুলনা-৩ আসন, ময়মনসিংহ-৩ আসনগুলোর আয়তন, জনসংখ্যা ও ভোটার পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা থেকেও অনেক কম। সারা দেশের ২৪টি আসনে বান্দরবানের চেয়ে ভোটার সংখ্যা কম। তিন পার্বত্য জেলায় ২৬টি উপজেলা রয়েছে, যেখানে মাত্র ৩ জন সংসদ সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায্য দাবি হলো - সংসদীয় আসন ৩টি থেকে আটটিতে উন্নীত করে মৌলিক অধিকার ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
লিখিত দাবীতে স্বাক্ষর করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি প্রকৌশলী শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব এবং প্রকৌশলী নাজমুল হক। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি পাইশিখই মারমা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহীম খলিল চৌধুরী।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায়নি। জনপ্রতিনিধি জনসংখ্যার তুলনায় কম হওয়ায় নাগরিক সেবা মিলছে না। তাই আসন সংখ্যা বাড়িয়ে আটটি করা প্রয়োজন।
তারা রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও গুইমারা নিয়ে খাগড়াছড়ি-১; মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি ও পানছড়ি নিয়ে খাগড়াছড়ি-২; এবং খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা নিয়ে খাগড়াছড়ি-৩ আসন গঠনের প্রস্তাব করেছেন।
এদিকে বাঘাইছড়ি, লংগদু ও বরকল নিয়ে রাঙামাটি-১; রাঙামাটি সদর, নানিয়ারচর ও কাউখালী নিয়ে রাঙামাটি-২; এবং জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী ও কাপ্তাই নিয়ে রাঙামাটি-৩ আসন চেয়েছেন তারা।
এছাড়া তারা বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি (বোয়াংছড়ি নয়) নিয়ে বান্দরবান-১; এবং লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি নিয়ে বান্দরবান-২ আসন প্রস্তাব করেছেন।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর