বগুড়া-৫ (শেরপুর ও ধুনট) আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠ এখন সরগরম। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ, কর্মীসভা আর সাধারণ ভোটারদের হিসাব-নিকাশে এই জনপদ উত্তাল।
জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা দবিবুর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় নির্বাচনের সমীকরণ আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মাওলানা দবিবুর রহমান। সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জামায়াতের সক্রিয় উপস্থিতির জানান দিলেন।
অন্যদিকে, এই আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে প্রধান নির্বাচনী আলোচনা। পরিসংখ্যান ও তৃণমূলের শক্তির বিচারে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাকে অভিজ্ঞতার নিরিখে এগিয়ে রাখছেন। তবে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জানে আলম খোকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলেও গত কয়েক বছরে তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় ব্যাপক উত্থান ঘটেছে, যা বড় দলগুলোর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, এবার শেরপুর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭০৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩৯ জন। বিশেষভাবে নজর কেড়েছে ৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের অন্তর্ভুক্তি, যা সামাজিক বৈষম্য হ্রাসের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে উপজেলায় ৯৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫৪৪টি ভোটকক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নিরাপত্তা ইস্যু। ৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৭টি কেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এসব কেন্দ্রে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোবাইল টহল এবং বিশেষ মনিটরিং টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধি রক্ষায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সক্রিয় রয়েছেন এবং যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের লড়াই, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার টানাপোড়েন আর প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে বগুড়া-৫ আসন এখন সারা দেশের দৃষ্টির কেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে কে হাসবেন শেষ হাসি, তা দেখতে এখন অধীর অপেক্ষায় শেরপুর-ধুনটবাসী।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর