নোয়াখালীর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন নোয়াখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিটের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ আগস্ট ছনখোলা মাজার কমপ্লেক্সের এলাকায় একটি নলকূপ স্থাপনের আবেদন নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের দপ্তরে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার কথা না শুনেই নানানভাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধার দিকে তেড়ে আসেন এবং চরমভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের অসদাচরণসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বর্ণনা দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং নোয়াখালী জেলাতেও অভিযোগ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নোয়াখালীতে যোগদানের পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে পুরো অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, এ অফিসে যতগুলো প্রকল্পের টেন্ডার হোক, সবগুলো টেন্ডারের কাজ তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পায়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মোট ৭টি গ্রুপে টেন্ডার হয়। সেসব টেন্ডারে একাধিক ঠিকাদার দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারকে কাজ পেতে সহযোগিতা করেছেন। যা সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, তিনি কাজ পাওয়া ঠিকাদার থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন, যার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
জানা যায়, গত ২০২৪ সালের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসলে তার বেশিরভাগ টাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিল ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের কাজের অনুমোদন ও বিল পরিশোধের সময় অনৈতিকভাবে ৫ শতাংশ টাকা 'পিসি মানি' বলে বিল থেকে কেটে রেখে দেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম জানান, "দুর্নীতির প্রতিভূ এই নির্বাহী প্রকৌশলী ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর বন্ধ প্রকল্প থেকে ৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে চালু করেছেন। এভাবে তিনি প্রতিটি প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।"
জেলা শহরের জ্যেষ্ঠ একজন সাংবাদিক জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে নির্বাহী পদে যোগদানের পর তার দপ্তরে তার সাথে পরিচয় করতে গেলে, তাদের দীর্ঘ এক ঘণ্টার অধিক সময় বসিয়ে রেখে একপর্যায়ে বলেন, "একজন একজন করে আসেন।" পরে তারা তার অভদ্রতামূলক কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে তাৎক্ষণিক চলে আসেন।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নোয়াখালী জেলার প্রাক্কলনিক কর্মকর্তা রাজিব চন্দ্র দাসের সাথে দুদকের অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, "বিষয়টি সঠিক নয়।" তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের কথাও বলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী জেলার উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, "জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের বিষয়ে এক ব্যক্তি অভিযোগ দিয়েছেন। ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে।"
তবে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সালাউদ্দিন/সাএ
 সর্বশেষ খবর