
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান জানানো হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিবৃতি সূত্রে জানা যায়, কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে গত ৩১ আগস্ট সকাল ১১টায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় উপস্থিত ২৫১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জন শিক্ষক বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রাথমিকভাবে ২/৩ জন শিক্ষকের দ্বিমত থাকলেও পরবর্তীতে কমিটির প্রস্তাবিত ৬টি সুপারিশমালা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সভা শেষ হওয়ার পূর্বেই জানা যায় যে, সভার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয়ে কর্তৃপক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০ জনকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে তালাবদ্ধ করে জিম্মি করে। শিক্ষকদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ ষাটোর্ধ্ব, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও গর্ভবতী মহিলা শিক্ষকগণও ছিলেন।
তীব্র গরমে ও অভুক্ত অবস্থায় প্রশাসন ও আটকে পড়া শিক্ষকরা কোনো রূপ শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা না করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং বারবার শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ জানান বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এই বিষয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই অনুরোধে কোনো রূপ কর্ণপাত করেনি। এমনকি নারী শিক্ষকদের ভোগান্তি ও অভুক্ত অবস্থার কথা তারা বিবেচনায় নেয়নি। শেষ বিকেলের দিকে আটকে পড়া শিক্ষকদের স্বজন, বয়স্ক বাবা-মা এবং কিছু এলাকাবাসী উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় অডিটরিয়ামের চারপাশে জড়ো হওয়া শুরু করে। শিক্ষকরা ধৈর্যহারা না হয়ে কোনো রূপ বল প্রয়োগ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান। দফায় দফায় তাদের কাঙ্ক্ষিত দাবীর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে মর্মে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি বুঝতে চেষ্টা করেনি বরং সকলকে প্রায় ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অডিটরিয়ামের দক্ষিণ ও মুক্তমঞ্চের দিকের গেট কে বা কাহারা তালা ভেঙে খুলে দেয় এবং সারাদিন আটকে থাকার পর বের হবার সুযোগ পেয়ে আটকে পড়া শিক্ষকরা সবাই বের হয়ে আসেন। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্ররা বাঁধা দিতে আসলে কয়েকজনের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে জেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মর্মাহত এবং আহতদের সাথে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষকদের বাসা থেকে আগত স্বজন বা, কর্মচারী ও বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীদের যারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, তাদেরকে ঢালাওভাবে বহিরাগত হিসেবে আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে উত্তপ্ত করা হয়েছে এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। গেট দুটোর তালা কে বা কাহারা ভেঙেছে তা তৎক্ষণাৎ জানা যায়নি। এটা বাইরে থেকে আটকে পড়া শিক্ষকদের স্বজন বা, তাদের পরিচিত এলাকাবাসী বা কর্মচারীদের কেউ করেছে কি না - তা তদন্তসাপেক্ষ। এ ব্যাপারে বহিরাগত কেউ জড়িত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাকে অবশ্যই শান্তির আওতায় আনা হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীর প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকতা প্রদর্শন করে তা পূরণের যথাযথ ব্যবস্থা নিলেও অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে শিক্ষকবৃন্দকে মুক্ত করার পর একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবীর বাইরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন শৃঙ্খলা জেলা প্রশাসনের নিকট ন্যস্ত করা হয় এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী যেই হোক তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং তদন্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করছে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর