
গাজীপুর সদর উপজেলার নয়নপুর রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস এলাকায় (স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে) বৃক্ষ ও কুটির শিল্প মেলার নামে চলছে লটারি ব্যবসা। মেলা শুরু হওয়ার মাত্র একদিনের মধ্যেই র্যাফেল ড্রয়ের নামে অবৈধ লটারি চালু হয়, যা এখন মেলার মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও মাঠের অপর পাশে বন বিভাগের জায়গায় গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে বিশাল পার্কিং এলাকা। সেখানে গাড়িপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে প্রশাসন জানাচ্ছে, এই মেলার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং মেলার কর্তৃপক্ষও অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মতো সুরক্ষিত স্থানে কোন অদৃশ্য ক্ষমতার বলে চলছে এই মেলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট রোববার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে মেলা শুরু হয়। এর পরদিন থেকেই শুরু হয় লটারি বিক্রি। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রতিটি গাড়িতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার লটারি বিক্রি করছে। দৈনিক প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার লটারি বিক্রি হলেও পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার সামগ্রী। বাকি অর্থ চলে যাচ্ছে মেলার আয়োজকদের পকেটে।
রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিনা খানম জানান, বান্ধবীদের নিয়ে মেলায় এসে আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভে ১০০টি লটারি টিকিট কিনলেও একটিও পুরস্কার পাননি তারা। তার মতো গাজীপুরের হাজারো শিক্ষার্থী তাদের জমানো টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এমনকি ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে লটারির টিকিট কিনছে।
স্থানীয় কারখানার কর্মকর্তা আব্দুল হক বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে মেলায় কুটির শিল্প ও বৃক্ষ মেলা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে লটারি। সাধারণ মানুষ এতে প্রতারিত হচ্ছে।
শ্রমিক সাইফুল ইসলাম জানান, দৈনিক রোজগারের টাকা দিয়ে লটারি কিনেছি। ভেবেছিলাম অন্তত পুরস্কার পাব, কিন্তু কিছুই পাইনি।
অটো চালক মুরসালিন জানান, দৈনিক ৫টি টিকিট ক্রয় করি। এই পর্যন্ত ৬০০ টাকার টিকিট ক্রয় করেছি, একটি পুরস্কারও পাইনি। আমার মতো আরো অনেকে লোভে পড়ে শত শত টাকার টিকিট কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
এক দোকান কর্মচারী রুবেল মিয়া বলেন, ভ্যানগাড়িতে লটারি বিক্রির সময় বলা হচ্ছে এটি সেনাবাহিনীর অনুমোদিত। আবার বড় পুরস্কারের লোভ দেখানো হচ্ছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
মেলার ব্যানারে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি মাইকিং করে সেনাবাহিনীর অনুমোদিত বলে প্রচার চালিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
অনুমোদন কোথা থেকে নিয়েছেন জানতে চাইলে মজিবর বলেন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড থেকে আমাদেরকে ৩০ দিনের জন্য বৃক্ষ ও কুটির শিল্প মেলার অনুমোদন দিয়েছে।
ক্যান্টনমেন্ট ও সেনানিবাস সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, তারা আমাদের কাছে এসেছিল, কিন্তু আমরা কোনো ধরনের অনুমতি দিইনি।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও পুলিশ কমিশনার অবগত হতে পারেন।
জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ তৌহিদ আহমেদ জানান, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় আমার অফিসার পাঠিয়ে নিষেধ করেছি যে, কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কার্যক্রম করা যাবে না। অনুমোদনের কাগজও তারা দেখাতে পারেনি। শুনেছি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নামে অনুমতির কথা বলছে, তবে বাস্তবে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এটা সেনাবাহিনীর এলাকা, তারা পুলিশি সহায়তা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।
সচেতন মহল ও দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলা হওয়া উচিত আনন্দ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উৎসব হিসেবে। কিন্তু বর্তমানে এটি সাধারণ মানুষের জন্য প্রতারণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর