
কক্সবাজার শহরের প্রাণ বাঁকখালী নদীর তীর দখলমুক্ত করতে চলমান উচ্ছেদ অভিযানে তৃতীয় দিনে বড় বাধার মুখে পড়েছে প্রশাসন। স্থানীয়দের বিক্ষোভ, নারী-পুরুষের মানবপ্রাচীর ও এক্সকাভেটরের সামনে বসে পড়ায় বুধবার দুপুরে অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
প্রশাসনের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নদীর তীরে গড়ে ওঠা শত শত অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, তাদের জমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তাই প্রাণ গেলেও ঘরবাড়ি ছাড়বেন না তারা।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে কস্তুরাঘাটের পেশকারপাড়ায় অভিযানে নামে প্রশাসন। এক্সকাভেটর দিয়ে স্থাপনা ভাঙার চেষ্টা হলে শুরু হয় বিক্ষোভ। নারীরা রাস্তায় বসে পড়েন, অনেকে এক্সকাভেটরে উঠে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানটান উত্তেজনার পর বিকেল চারটা পর্যন্ত অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।
৫৫ বছরের ছবিরা খাতুন বলেন, "আমরা নিরীহ মানুষ। অনেক কষ্টে এখানে বসতি গড়েছি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমাদের।" একই কথা জানান রহিমা বেগমও, "আপনারা যেমন মানুষ, আমরাও তো মানুষ। উচ্ছেদ করলে আমরা কোথায় যাব?"
অভিযানের সময় শত শত মানুষ স্লোগান দিতে থাকেন, "প্রাণ দিব, উচ্ছেদ করতে দেব না।"
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, "স্বার্থান্বেষী মহল উচ্ছেদ কার্যক্রমে বারবার বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই আপাতত অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেনা, র্যাব, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
প্রশাসন জানায়, এর আগের দুই দিনে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় বাঁকখালীর প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবারও দখলদারদের ছোড়া ইটপাটকেলে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে চারজনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে বাঁকখালী নদী। নদীর নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। গত এক দশকে এখানে গড়ে উঠেছে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা।
যদিও ২০১০ সালে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক ঘোষণা করে, কিন্তু জমি বুঝিয়ে না দেওয়ায় দখল বন্ধ হয়নি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বড় অভিযান চালিয়ে ৬০০-এর বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন দখলমুক্ত হওয়া জায়গায় আবারও স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট নির্দেশ দেন, বাঁকখালী নদীর সীমানা নির্ধারণ করে আগামী চার মাসের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই নির্দেশের পর গত শনিবার কক্সবাজার সফরে গিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ঘোষণা দেন, সমন্বিত তালিকা করে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। তার পরের দিন থেকেই শুরু হয় অভিযান।
তবে তৃতীয় দিনে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধে হোঁচট খেয়ে থমকে গেছে বাঁকখালী দখলমুক্তির প্রচেষ্টা।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর