
মোংলা বন্দর, যা একসময় সুন্দরবনের উপকূলের একটি রপ্তানি নির্ভর বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটি আজ অপার সম্ভাবনার এক নতুন নাম। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে অর্জিত অভূতপূর্ব রাজস্ব আয় এই বন্দরের নতুন অগ্রযাত্রার নজির স্থাপন করেছে। এটি এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামো আধুনিকায়ন করে সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি এখন শুধু দক্ষিণবঙ্গের নয়, পুরো বাংলাদেশের বাণিজ্যিক গতিপথ বদলে দিচ্ছে। আগামীর দক্ষিণবঙ্গের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত এই বন্দর, নতুন দিগন্ত উন্মোচনে বদ্ধপরিকর। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বন্দরের আয় বৃদ্ধিতে বেশ কিছু বিষয় কাজ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা। নতুন জেটি, ইয়ার্ড নির্মাণ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, নদী পথ, উন্নত সড়ক ও সম্প্রতি বন্দরের সাথে রেল যোগাযোগ সংযোজন বন্দরের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বন্দরে পণ্য খালাস ও পরিবহনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে বন্দরের ধারণক্ষমতা আরও বাড়ানো এবং চ্যানেলের গভীরতা বাড়িয়ে আরও বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য বিশেষায়িত জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। ইতিমধ্যে চীনের সাথে জিটুজি চুক্তির আওতায় আরও দুটি কন্টেইনার টার্মিনালসহ কন্টেইনার টার্মিনাল ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। আমদানিকৃত গাড়ি নিরাপদে রাখার জন্য পর্যাপ্ত কার ইয়ার্ড, শেড, ওয়ার হাউজ এবং স্পেস রেন্ট কম থাকায় দেশে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির ৫৫ শতাংশ মোংলা বন্দর থেকে খালাস হয়। বন্দরের এই অগ্রযাত্রা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ছে। এটি স্বপ্ন পূরণের এক প্রতীক।
বন্দরের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ৩৮৭ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে বন্দরে ৩৪ হাজার ৩৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৪৬ লাখ টাকা এবং দুই দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তাদের সময়োপযোগী পরামর্শ বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেক হোল্ডার, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও স্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় এই সফলতা অর্জিত হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠন করার ফলে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরে জাহাজ জট নেই এবং গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। পর্যাপ্ত কন্টেইনার রাখার জন্য সাতটি কন্টেইনার ইয়ার্ডও রয়েছে।
সর্বশেষ খবর