
শ্যালো মেশিন চুরির অপবাদ দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কার্তিক চন্দ্র (৪৫) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের কুয়াভিটা নায়ানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কার্তিক চন্দ্র ওই এলাকার খোনা চন্দ্রের ছেলে।
গত রোববার রাতে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহা. আরশেদুল হক।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে কুয়াভিটা নায়ানপুর এলাকার একটি ধানক্ষেতের বিল থেকে সাদেকুল নামে এক ব্যক্তির শ্যালো মেশিন চুরি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার নিমাই রায়ের ছেলে কানাই রায়ের (চিহ্নিত মাদকসেবী) শ্যালো মেশিন চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। কানাই রায় ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে। নেশাগ্রস্ত ছেলের এই চুরির দায় ঢাকতে নিমাই রায় স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু চুরির দায় এড়ানোর জন্য ওই গ্রামের নিহত কার্তিকের ছেলে কপিল দেবের ওপর চুরির অপবাদ চাপানোর চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে নিমাই রায় ও কার্তিক রায়ের দুই পরিবারের মধ্যে প্রচণ্ড বাগ্বিতণ্ডা হয়।
ঘটনার দিন রাতে নিমাই চন্দ্র তার নিজের দোষ ঢাকতে কার্তিকের ছেলে কপিলকে ডেকে এনে শ্যালো মেশিন চোর বানানোর চেষ্টা করে।
এ সময় বাবা কার্তিক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা বাঁধে। ওই সময় তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পিটুনিতে ওই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগ দেন কানাই, নিমাই, হেদা, হরিলাল রায়, কালোকটু রায়, ডালিম রায়, সকাল চন্দ্র রায়, হিরেন রায় হদা, বিকাল রায়, কাশিনাথ রায়, ধোলা রায়, কমলেশ রায়।
সবাই মিলে কার্তিক রায়কে কুয়াভিটা গ্রামের চৌরাস্তা থেকে জোর করে ধরে তাদের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কার্তিকের গলা, হাত ও মাথায় আঘাতের ফলে কার্তিক রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
রাতেই কার্তিক রায়কে উদ্ধার করে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয় স্থানীয়রা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের ছেলে কপিল দেব, জামাই মিঠুন রায় ও স্বজন প্রিন্সের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরে একই গ্রামের হুদা ও তার সহযোগীরা নানা অজুহাতে কার্তিককে হয়রানি করে আসছিলেন। সোমবার রাতেও তারা শ্যালো মেশিন চুরির অপবাদ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ধারালো রামদা দিয়ে কুপিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
তারা আরও জানায়, কানাইয়ের ছেলে নিমাই একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। গ্রামের সবাই এটি জানে। নেশার টাকার জোগাড় করতে নিমাই স্থানীয় কিছু ছেলেকে নিয়ে শ্যালো মেশিন চুরি করে। পরে চুরির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায় এবং এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানায় একটি অভিযোগও করা হয়। কানাই রায়ের পরিবার প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি হওয়ায় তার ছেলের নামে থানায় চুরির অভিযোগ করার কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নিজের ও পরিবারের নাম বদনাম হবে ভেবে সে প্রতিশোধমূলক এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহা. আরশেদুল হক বলেন, শ্যালো মেশিন চুরির অপবাদে কার্তিক নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের শরীর ও মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ খবর