
রাজধানীর বনশ্রীর ব্যস্ত নগরজীবনের মাঝেই কংক্রিটের ছাদে গড়ে উঠেছে এক টুকরো গ্রামবাংলার আবহ। আলহাজ্ব লায়ন এম. এ. কুদ্দুস ও তার স্ত্রী হাসিনা মমতাজ গড়ে তুলেছেন এক বিস্ময়কর ছাদকৃষি, যা শুধু তাদের পরিবারকেই নয়, আশপাশের মানুষকেও মুগ্ধ করছে।
৭ হাজার ৫০০ বর্গফুটের এই ছাদে আজ দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ। আছে বিশাল এক আমগাছ, যা এ বছরই দেড় মণের মতো আম ফলন দিয়েছে। রয়েছে সারা বছর ফল দেয়া তেঁতুলগাছ, নিয়মিত পেঁপের ফলন, আর সাথে আছে জাম, আমড়া, লেবু, জলপাই, চালতা, শাকসবজি ও নানা ধরনের মসলার গাছ। এক কথায়, গ্রামীণ জীবনের স্বাদ যেন চলে এসেছে শহরের ছাদে।
এই ছাদবাগানের শুরুটা ছিল বেশ অপ্রত্যাশিত। পরিবারের দৈনন্দিন জৈব বর্জ্য—সবজি ও ফলের খোসা, ডিমের খোসা—ফেলে রাখতেই সেখানে গজিয়ে ওঠে নানা ধরনের গাছ। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বাগান, আর আজ তা রূপ নিয়েছে এক সবুজ স্বর্গে। বিশেষত্ব হলো, এখানে কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। শুধু জৈব সার ব্যবহার করা হয়, যা গাছকে যেমন রোগমুক্ত রাখছে, তেমনি ফলনকেও করছে সুস্বাদু ও নিরাপদ।
এই ছাদকৃষি এখন শুধু পরিবার বা এলাকাবাসীর জন্য নয়, বরং শিক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে, হাতে-কলমে গাছ লাগানোর অভিজ্ঞতা নেয় এবং পরিবেশবান্ধব কৃষির কৌশল শেখে। ফলে এটি এক প্রকার প্রাকৃতিক ল্যাবরেটরি হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।
আলহাজ্ব লায়ন এম. এ. কুদ্দুস এবং হাসিনা মমতাজ মনে করেন, ছাদবাগান শুধু খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার উপায় নয়, বরং মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধনেরও এক অসাধারণ মাধ্যম। তাদের মতে, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে শহরের সীমিত জায়গাকেও কাজে লাগিয়ে তৈরি করা যায় এমন সবুজ স্বর্গ।
১০ সেপ্টেম্বর চ্যানেল আই-এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “ছাদকৃষি”–তে শাইখ সিরাজের উপস্থাপনায় এই বাগান দেখানো হলে দর্শকরাও মুগ্ধ হন। কংক্রিটের জঙ্গল ঢাকা ঢাকায় এই দম্পতির উদ্যোগ যেন প্রমাণ করে দিল—সবুজের স্বপ্ন কেবল গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, চাইলে শহরের ছাদেও ফুটে উঠতে পারে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
সর্বশেষ খবর