পাবনায় দশ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও গুলির অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ এবং একজন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন, চরতারাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ শফি (৪৫) এবং বিএনপি নেতা টিক্কা খান (৪৭)। আহত ব্যক্তি হলেন দাসপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম বিশ্বাস (৫০)। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী বলে জানা গেছে।
অভিযুক্তরা হলেন চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিক এবং তার দুই সহযোগী তনসের মোল্লা ও শামীম বিশ্বাস।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আবুল কাশেম বিশ্বাস, শেখ শফি, টিক্কা খানসহ কয়েকজন কথা বলছিলেন। এমন সময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিকের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা বাড়ির গরুর ঘরের পিছন থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এরপর স্কুলের সামনে এসে আবারও গুলি ছোড়েন। এসময় বিএনপি নেতা শেখ শফি গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রায় আধাঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে বিএনপি নেতা টিক্কা খানকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ শফির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মালয়েশিয়া প্রবাসী আবুল কাশেম বিশ্বাস বলেন, "১৭ বছর ধরে আমি মালয়েশিয়াতে থাকি। আমরাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবদলের সালাম প্রামানিক প্রায়ই চাঁদার দাবিতে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিতো। আমি চলতি মাসের ৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি। আসার পর যুবদলের এসব নেতা আবারও দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বলি যে আমিও তো বিএনপি করি তাহলে বিএনপি করে বিএনপিকে চাঁদা দিতে হবে কেন। এসব আবদার পূরণ না করায় আমার বাড়িতে এসে অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমার সঙ্গে বসে থাকা দু'জনকে গুলি করে। এসময় আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে চলে যায়।"
তিনি আরও বলেন, "এই চক্রটি সালিশি বাণিজ্য, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি সহ এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।"
অভিযুক্ত চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিক বলেন, "আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এখানের কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই।"
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মনির হোসেন বলেন, "ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। প্রকৃত তদন্ত হবে। তদন্তে যদি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোপূর্বেও আমরা যত অভিযোগ পেয়েছি, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।"
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, "প্রবাসে থাকা অবস্থায় আবুল কাশেম যুবদল নেতা সালামদের বালুর ব্যবসা নিয়ে লেখালেখি করতেন। বিদেশ থেকে বাড়ি আসার পর আবুল কাশেমের সঙ্গে শেখ শফি ও টিক্কাকে মিশতে নিষেধ করেছিলেন সালাম। এর জের ধরে ইউনিয়ন যুবদল নেতার নেতৃত্বে গুলির ঘটনা ঘটে। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শর্টগানের গুলির দুটি খোসা পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।"
বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত মামলা হয়নি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর