
ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট উক্তি ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থানের ১২ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর পরই এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৮ জন শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলামের ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ এবং ‘আপনাদের ভাই ছেড়ে যাওয়ার মানুষ না’ উক্তিকে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১ সেশন), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), সোহান (ল ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), মোজাম্মেল (দাওয়াহ ২১-২২), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১)। তারা সবাই ইবি শাখা ছাত্র শিবিরের হল ও ফ্যাকাল্টির কর্মীর বলে জানা গেছে।
তবে অভিযুক্ত শিবির কর্মীরা দাবি করেছেন, মূল ভিডিওটি আসলে ২৭ সেকেন্ডের ছিল, যা কাঁটছাট করে প্রচার করা হয়েছে। ওই ভিডিওতে আবিদুল ইসলামের জুলাই-সংশ্লিষ্ট স্লোগান ব্যঙ্গ করা হয়নি; বরং ডাকসু নির্বাচনের সময় তার প্রচারণার বিভিন্ন উক্তিকে সমালোচনা করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, পুরো ভিডিও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে “তুমিও জানো, আমিও জানি, সাদিক কাইয়ুম পাকিস্তানি”Ñএই স্লোগানও দেওয়া হয়। এখন যদি কেউ মনে করেন ভিডিওতে আবিদুলকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে, তাহলে বলতে হয় সাদিককেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাদিকের বিষয়টি কেউ উল্লেখ করছে না।”
অভিযুক্তদের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের সময় একটি ভিডিওতে এক ছাত্রীকে আবিদুলকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, “ভাইয়া হারেন-জিতেন ছেড়ে যাইয়েন না, প্লিজ।” জবাবে আবিদুল বলেন, “তোমার ভাই ছেড়ে যাওয়ার লোক না।” মূলত এরকম ভিডিওগুলো দেখেই আমরা এই ভিডিও বানিয়েছি।
জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নাহিদুর রহমান এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্ট করার তিন দিন পর, গতকাল শুক্রবার রাতে ভিডিওটির একটি খণ্ডাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ওই খণ্ডাংশ দেখে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ নিয়ে ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান লেখেন,“পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি, এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা লেখেন, “কথাটাতে ভুল কোথায়? আবিদ জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে, ৫ আগস্টের গুলিবর্ষণের মধ্যে বলেছিলেন—‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাবেন না’। কিন্তু আমরা কেউ একসাথে থাকতে পারিনি। সবাই বিভক্ত হয়ে গেছে। গুজব, হিংসা আর অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। তাই বলে কি অভ্যুত্থান মিথ্যা হয়ে যায়? ঐক্যের বাণী মিথ্যা হয়ে যায়? এটাই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি আপনাদের কাছে।”
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদী লেখেন,“এইসব স্টুপিডিটি বন্ধ করতে হবে। আবিদের রাজনীতি আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে, কিন্তু সে জুলাইয়ের নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। তার বক্তব্যটি জুলাইয়ের এক অনবদ্য দলিল।”
ওমর ফারুক নামে অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই সংশ্লিষ্ট আবিদ ভাইয়ের অবদানকে কটাক্ষ করার চিন্তা থেকে এই ভিডিও তৈরি করা হয়নি। মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি যে ভঙ্গিতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ওই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। জুলাইয়ে কারো অবদানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তবুও এই ভিডিও দেখে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সোহান হাসান সাকিব নামে এক শিক্ষার্থী ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেন, এই ভিডিওটি আমরা করেছি সহপাঠীদের মধ্যে আড্ডার ছলে। এটি সেন্স অব হিউমার থেকে করা। এইটা জাস্ট একটা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। ভিডিওটিতে আবিদ ভাইয়ের কথার পাশাপাশি সাদিক কায়েম ভাইকে নিয়েও মন্তব্য ছিল। জুলাই যোদ্ধা আবিদ ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তার হৃদয়গ্রাহী আহ্বানÑ“প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না” আন্দোলনের কঠিন মুহূর্তে হাজারো শিক্ষার্থীর মনোবল ধরে রেখেছিল, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আমরাও আন্দোলনের মাঠে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। আমাদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়েছেন সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আবিদ ও সাদিক ভাইসহ সকলের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ওরা কিছু বন্ধুরা মিলে মজার ছলে ভিডিওটি করেছেন। পরে বুঝতে না পেরে ফেসবুকে দিয়েছেন। কিন্তু একটা মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইস্যু ক্রিয়েট করার জন্য আংশিক ভিডিও ফেসবুকে ছড়াচ্ছেন। ওই ভিডিওতে তারা সাদিক কায়েমকে নিয়েও ট্রল করেছেন। ভিডিওতে থাকা কয়েকজন জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন, নির্যাতিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে এখন জুলাইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। আবিদ ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।’
এদিকে ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলামের উক্তিকে ব্যঙ্গ করে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একদল শিক্ষার্থী। শনিবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় ক্যাম্পাসের বটতলায় এ কর্মসূচি করেন তারা। এছাড়াও এ ঘটনায় শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে শাখা ছাত্রদল।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর