
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গণনা প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, নির্ভুলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বহুমাত্রিক প্রস্তুতি ও প্রযুক্তি-নির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এ গণনা প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত ছিল বলে জানানো হয়।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ডাকসু নির্বাচনের চীফ রিটার্নি কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের বরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব জবাব দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ভোটাররা ডাকসুর জন্য পাঁচটি পৃথক ব্যালট এবং প্রতিটি হলের জন্য একটি ব্যালট ব্যবহার করেন। নির্দিষ্ট প্রার্থীর নাম্বারসংবলিত ঘরে ক্রস (×) চিহ্ন দিয়ে ভোট প্রদান করা হয়। ভোটগ্রহণ শেষে ১৪টি ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) মেশিনের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যালট স্ক্যান করে ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করা হয়। কিছু মেশিন প্রতি ঘণ্টায় চার হাজার এবং কিছু মেশিন ছয় হাজার ব্যালট প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম ছিল। নির্ভুলতা নিশ্চিতে কোথাও উচ্চক্ষমতার মেশিন এবং কোথাও দুটি মেশিন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
ভোট গণনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ব্যালট স্ক্যান ও ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি, দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থীর ভোট গণনা এবং তৃতীয় ধাপে অডিট ও রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করেন সিএসই ও আইআইটির মোট আটজন শিক্ষক, যাদের সহায়তা দেন আইসিটি সেল ও ভর্তি অফিসের আটজন প্রোগ্রামার।
ভোটের আগে কঠোর প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফ্যাকাল্টি সদস্যরা Python-এ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামাররা PHP/MySQL-এ এবং ভেন্ডর Visual FoxPro-এ তিনটি পৃথক গণনা সফটওয়্যার তৈরি করেন। ডাকসু ও হল নির্বাচনের ব্যালট দিয়ে র্যান্ডম টেস্ট কেস তৈরি করে সফটওয়্যারগুলো পরীক্ষা করা হয় এবং সবগুলোতেই অভিন্ন ফলাফল পাওয়া যায়। ৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের উপস্থিতিতে ড্রাই রান সম্পন্ন হয়। এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর সব ওএমআর মেশিন দিয়ে ২৩ ধরনের ব্যালট পরীক্ষা করে সেগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করা হয়।
৯ সেপ্টেম্বর ভোট গণনার দিন প্রতিটি কেন্দ্রে একজন শিক্ষক, একজন প্রোগ্রামার, ভেন্ডর প্রতিনিধি ও কয়েকজন অপারেটর মিলে স্ক্যানিং ও গণনা সম্পন্ন করেন। বিকেল চারটার মধ্যে সব সরঞ্জাম সেটআপ সম্পন্ন হয়। ভোট শেষে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্স খোলা হয় এবং বিএনসিসি ও স্কাউট স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় ব্যালট সাজানো হয়। প্রতিটি স্ট্যাকের প্রথম ব্যালট হাতে গুনে যাচাই করা হয় এবং পর্যবেক্ষকরা এলোমেলো ব্যালটও পরীক্ষা করেন। পরে তিনটি সফটওয়্যারে সমান্তরালভাবে ফলাফল গণনা করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফল মুদ্রণ করে কেন্দ্রপ্রধানকে প্রদান করা হয় এবং সার্বিক ফলাফল একত্রিত করে প্রকাশ করা হয়।
পুরো ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং সিসিটিভির মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা হয়। খালি ব্যালট বাক্স প্রদর্শন, সিলকরণ, ভোট প্রদান, ব্যালট সিলমোহর, স্ক্যানিং, ফলাফল যাচাই- সব ধাপ ভিডিওতে নথিবদ্ধ করা হয়। এসব ভিডিও ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সব ব্যালট স্ক্যান করে ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি, তিনটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্রস-ভেরিফিকেশন এবং সার্বিক ফলাফল ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ ও গণমাধ্যমের জন্য তথ্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সব ব্যালট সীলকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।
প্রতিটি ভোটারের উপস্থিতি রেজিস্টারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে, যা ডিজিটালি স্ক্যান করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব তথ্য গোপন রাখা হবে এবং শুধুমাত্র আদালতের বৈধ অনুরোধে ব্যবহার করা যাবে।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হলসংসদ নির্বাচন বিরতিহীনভাবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডাকসুতে ২৮ পদের ভেতরে শীর্ষ ৩ পদসহ ২৩টি পদই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জয়ী হওয়ার দাপট রয়েছে। এছাড়া বাকি পাঁচটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
অন্যদিকে ১৮ হলের হলসংসদ নির্বাচন ১৩ পদের বিপরীতে শিবির সমর্থিতরা ভালো অবস্থান দখল করেন। এছাড়া পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ীও হয়েছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর