
কুমিল্লার দেবিদ্বারে পরিবারের সদস্যদের নিখোঁজ নাটকের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কিতে লুকিয়ে রাখার ৩৫ দিন পর করিম ভূঁইয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৩ নং রসুলপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের গাবুদ্দি সরকার বাড়ির গোমতী নদীর সংযোগ খালের পাড়ের সেফটি ট্যাঙ্কিতে।
নিহত করিম ভূঁইয়া উপজেলার বড়শালঘর মন্ত্রীপুল সংলগ্ন ভূঁইয়া বাড়ির মৃত কাসেম ভূঁইয়ার পুত্র। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪০), দুই পুত্র তানজিদ ভূঁইয়া (২২), তৌহিদ ভূঁইয়া (২১) এবং দুই শ্যালক মোজাম্মেল হক (৪২) ও ইশরাফিল (৪০)-কে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় ও নিহতের বড় ভাই আমির হোসেন (৬০)-এর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার কেল্লা শাহ দরবারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া (৬০) ১৬ আগস্ট দেবিদ্বার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নং N৮৩৪)। নিখোঁজ ডায়েরির পর আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, নিজ এলাকায় এবং আখাউড়া কেল্লা শাহ মাজার এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিং করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের বড়ভাই মো. আমির হোসেন-এর ফোন নম্বরে একটি অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, “আপনার ভাইকে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।” আমির হোসেন বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করে থানায় এসে পুলিশকে অবগত করেন। পরে পুলিশসহ নিহতের শ্বশুরবাড়ি এবং আশপাশ এলাকায় খোঁজখবর নিতে থাকে। এক পর্যায়ে গোমতী নদীর সংযোগ খালের পাড়ে তাদের নির্মাণাধীন একটি নতুন সেফটি ট্যাঙ্কির ঢাকনা খুলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় করিম ভূঁইয়ার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের ভাই আমির হোসেন ভূঁইয়া আরও জানান, “আমার ভাইয়ের সাথে তাঁর স্ত্রী প্রতিনিয়ত পারিবারিক কলহে জড়িত থাকত, মামলা করে জেলও খেটেছে। প্রায়ই মা-ছেলেরা ঝগড়া করত। এ হত্যাকাণ্ড তারা ঘটিয়েছে ও নিখোঁজ নাটক করেছে।”
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, “এটি রহস্য ঘেরা হত্যাকাণ্ড, তদন্ত চলছে।” তবে করিম ভূঁইয়া নেশাগ্রস্ত এবং নারী লোভী ছিলেন, সে তার মেয়ের দিকেও কুনজর দিয়েছিল। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রী, পুত্র, শ্যালক মিলে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর