
দেশে এক ভয়াবহ নীরব নৈরাজ্য বিরাজ করছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকটাবস্থা চলমান থাকায় দেশের আকাশে ক্রমাগত কালোছায়া ঘনীভূত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সকল নৈরাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো বাংলাদেশ তরিকত পার্টি (বিটিপি)। কলুষ ও দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ রাষ্ট্র গড়তে সকল তরিকতপন্থী ভাই-বোন এবং সর্বস্তরের জনগণকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নতুন এই পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ হাসান আলী চিশতি।
আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। আদর্শবাদের ভিত্তিতে কলুষ ও দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ তরিকত পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ মোঃ মাসুদ রানা এবং সভাপতি মোহাম্মদ হাসান আলী চিশতি। সবার সহযোগিতা চেয়ে সভাপতি বলেন, জুলাই ২০২৪-এর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনের অবসানের পর সুদীর্ঘ সময়ে দেশে একটি নীরব নৈরাজ্যবাদ কায়েম হচ্ছে, সর্বসাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, দেশে শতাধিক মাজার শরিফে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, এমনকি কবর থেকে লাশ তুলে প্রকাশ্য দিবালোকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য ও বর্বর ঘটনা ঘটেছে। মাজার শরিফের খাদেমসহ অনেককে হত্যা, গুম-খুন করা হয়েছে। সারাদেশে নৈরাজ্য বিস্তার করছে, সারাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশ তরিকত পার্টির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও পবিত্র উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ তরিকত পার্টির লক্ষ্য ও পবিত্র উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও আদর্শগুলো দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হলো:
১. পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
২. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অক্ষুণ্ন রাখা এবং জুলাই ২০২৪-এর আন্দোলনের আদর্শ রক্ষা করা।
৪. আদর্শবাদের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করা।
৫. সমাজ তথা দেশের সর্বস্তরের সকল প্রকার অনিয়ম চিরতরে দূরীকরণ করা।
৬. ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা ও ধর্মীয় স্বাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়ন করা।
৭. ইসলাম ধর্মসহ দেশের প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৮. বেকার সমস্যা দূরীকরণ করা ও নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৯. গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন বৃদ্ধি করা।
১০. কৃষি খাতে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও কৃষি পণ্যের সঠিক বাজারমূল্য নিশ্চিত করা সহ কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি প্রদান করা।
১১. দেশের প্রতিটি পবিত্র মাজার শরিফ, মসজিদ ও মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১২. স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
১৩. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৪. প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করা।
১৫. প্রত্যেক ধর্মীয় মতাবলম্বী সম্প্রদায় নিজ নিজ মতের অনুশাসনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৬. শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
১৭. প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির পথ প্রসার করা হবে ও প্রত্যেক প্রশাসনকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা হবে।
১৮. নারী শিক্ষার উন্নয়ন ও মেধাবিকাশে সর্বোচ্চ সুযোগ প্রদান করা হবে।
১৯. মেধা অনুসারে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
২০. পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সড়ক মহাসড়কসহ সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।
২১. পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রী হয়রানি প্রতিরোধে উন্নত প্রযুক্তি ও টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
২২. স্বাধীন ও মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
২৩. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
২৪. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত করা হবে এবং সুশিক্ষা নিশ্চিতের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করা হবে।
২৫. চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি ও দখলদার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে শতভাগ সজাগ রাখা হবে।
২৬. দেশের সকল অসহায়, দুস্থ, গৃহহীন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হবে।
২৭. বৃদ্ধ পিতামাতা ও স্বজনের দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে সন্তানের গ্রহণ করা নিশ্চিত করা হবে।
২৮. শিক্ষা সংস্কৃতি, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সংগীত চর্চা সহ সকল গ্রামীণ ও দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে চর্চার সুযোগ প্রদান করা।
২৯. প্রত্যেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তিতে নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করা হবে।
৩০. খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল, সকল দেশীয় সবজি, অর্থকরী ফসল, মৎস্য খামার, পোল্ট্রি খামার, হ্যাচারিসহ সকল উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
৩১. দেশের সকল প্রকার এনজিও প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সরকারি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৩২. মানব সম্পদ উন্নয়ন ও বিদেশের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাধীন শ্রমবোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৩৩. দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন ও জনগণের গচ্ছিত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
৩৪. বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত করা হবে।
৩৫. বাংলাদেশকে জনগণের কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে।
৩৬. প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
৩৭. স্বাধিকার বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
আগামী দিনের আদর্শ বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাংলাদেশ তরিকত পার্টির মৌলিক লক্ষ্য ও পবিত্র উদ্দেশ্যগুলো সফল করতে দলমত, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে সমঝোতার সহিত আন্তরিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ তরিকত পার্টির ব্যানারে একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ হাসান আলী চিশতি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর