বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)-কে নিবন্ধন না দিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে জুলাই গবেষণা কেন্দ্র (জেআরসি)।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির মুখপাত্র অপু মেহেদী এ চিঠি জমা দেন। চিঠির সঙ্গে দলটির মহাসচিব মো. তহিদুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান নুজহাত সারওয়াত তমার বিরুদ্ধে ১৩৪ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।
জেআরসির অভিযোগ অনুযায়ী, দলটির চেয়ারম্যান সোহেল রানা লন্ডনে অবস্থান করায় সশরীরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। মহাসচিব তহিদুল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একাধিক হত্যা মামলার আসামি এবং জাল টাকা ছাপানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান নুজহাত সারওয়াত তমাও হত্যা মামলার আসামি এবং তার বিদেশ ভ্রমণে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অপর ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানকেও মামলাবাজ চক্রের সদস্য ও একাধিক মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, বিআরপি দলের প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে তথ্য গোপন করেছে। তাদের প্যাডে ১৯ জুলাই ২০২৪ উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আত্মপ্রকাশ হয় ওই বছরের ১৫ নভেম্বর, যেখানে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা নাজমুল আহসান কলিমুল্লা প্রধান অতিথি ছিলেন।
জেআরসি দাবি করেছে, তহিদুল ইসলাম ছিলেন ডিবির সোর্স এবং তৎকালীন দুই পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও সঞ্জিত কুমার রায়ের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা মামলার নজর এড়াতে তহিদুল ও তার স্ত্রী নুজহাত সারওয়াত তমা সংস্কারবাদী পার্টি গড়ে তোলেন। বর্তমানে তারা লন্ডনে বসে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের কার্যক্রম চালালেও মাঠে কোনো কর্মসূচি নেই।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দলের মহাসচিব তহিদুল ইসলাম, স্ত্রী নুজহাত সারওয়াত তমা এবং তার বাবা নূরুল হক একসঙ্গে দলের শীর্ষ পদে রয়েছেন। তহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি ও পল্লবীসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা রয়েছে। র্যাবের হাতে ২০২১ সালে জাল টাকা তৈরির মেশিনসহ গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে ছিলেন এবং পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক হন।
অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান নুজহাত সারওয়াত তমা ২০১৯ সালে তহিদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করার পর মহিলা লীগ ছেড়ে সংস্কারবাদী পার্টিতে যোগ দেন। ভাটারা থানার হত্যা মামলায় আদালত তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালসহ মোট ৩৯ জন আসামি আছেন।
জেআরসি বলছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগ থাকায় দলটির নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেআরসির মুখপাত্র অপু মেহেদী বলেন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি) একটি বিতর্কিত দল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-বিরোধীরা একজোট হয়ে দলটি গঠন করেছে। আমরা ইসিতে ১৩৪ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণাদি দিয়েছি। আশা করি নির্বাচন কমিশন আমাদের আবেদন গ্রহণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখবে।
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি যে ২২টি দলের নাম মাঠ পর্যায়ে যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করেছে, সেখানে সংস্কারবাদী পার্টি চার নম্বরে রয়েছে। দলটির নিবন্ধনের আবেদন করেছিলেন মহাসচিব তহিদুল ইসলামের বাবা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল হক।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর