• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৮ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৬ দুপুর

সংযোগ থেকে মিটার বদল- সবখানেই টাকা হাতান লাইনম্যান সুমন

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুতের চকরিয়া জোনাল অফিসের লাইনম্যান মোহাম্মদ সুমন মৃধার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড় জমেছে। সংযোগ নিতে চাইলে ঘুষ, মিটার বদলাতে চাইলে টাকা, এমনকি বকেয়া বিল মেটাতেও দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থ- ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগে ছেয়ে গেছে তার নামে দেওয়া চিঠিপত্র। একের পর এক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে শুরু করে কক্সবাজারের জেনারেল ম্যানেজারের টেবিল পর্যন্ত। তবুও ক্ষমতার ছায়ায় নিরাপদ এই লাইনম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ঘুষ-দুর্নীতির এই বৃত্তের আড়ালে কে বা কারা তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সুমন মৃধা শুধু দুর্নীতিই করছেন না, বরং এলাকার খারাপ লোকদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকরা বিদ্যুৎ চুরি করলে তিনি রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীদের নিয়ে গিয়ে মিটার খুলে নেন। পরে টাকা দিলেই ফের সংযোগ চালু করে দেন। এতে একদিকে যেমন গ্রাহকরা জিম্মি, অন্যদিকে অফিসের কর্মকর্তারাও থাকেন তার নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগকারীদের দাবি, নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা অফিসারদের দিয়ে আসছেন সুমন। ফলে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

চকরিয়ার কোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ বাহাদুর আলম এমন ভুক্তভোগীদের একজন। তিনি জানান, সাত- আট মাস আগে তার বাড়ির মিটার খুলে নিয়ে যান লাইনম্যান সুমন মৃধা। পরে সাত হাজার টাকা দিলে নতুন মিটার লাগিয়ে দেন। কিন্তু সেই মিটারটির রেকর্ড অফিসে আপডেট করা হয়নি। ফলে আট মাস ধরে তার নামে কোনো বিল আসে না। অফিসে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার ঘরে অন্যের মিটার বসানো হয়েছে। একইসঙ্গে দেওয়া টাকা আত্মসাৎ করেছেন সুমন।

বাহাদুর আলম বলেন, আমি নিজে অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমার নামে কোনো বিল আসছে না। সুমন আমার টাকা খেয়ে ফেলেছে। তাই বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।

অন্য এক ভুক্তভোগী আক্কাস উদ্দিন বিটু বলেন, একটি ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দেওয়ার জন্য সুমন মৃধা তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোনো রসিদ বা অফিসিয়াল অনুমোদন ছাড়াই নেওয়া হয়েছে এই টাকা। একইভাবে আকবর আহমদ নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তার বকেয়া ৭ হাজার ৮০০ টাকা অফিসে জমা দেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি আত্মসাৎ করেছেন সুমন।

পল্লী বিদ্যুতের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, সুমন মৃধার বিরুদ্ধে অতীতে ঢাকার অফিসেও নানা অভিযোগ ছিল। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করে কক্সবাজার পাঠানো হয়। তবে বদলির পরও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ধারা থামেনি, বরং আরও বেড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে এসে তিনি আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।

চকরিয়ার ভুক্তভোগী খোকন মিয়া সরাসরি কক্সবাজারের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, পশ্চিম স্টেশনে তার মিটার অবৈধ দেখানো হয়। পরে জোনাল অফিসের লোকজন গিয়ে মিটার খুলে নেয়। নতুন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে সুমন মৃধা তার কাছে ৯০ হাজার টাকা দাবি করেন।

খোকন মিয়া বলেন, এত টাকা না দিলে বিদ্যুৎ পাব না বলে হুমকি দেওয়া হয়। আমি বাধ্য হয়ে অভিযোগ করেছি।

অভিযোগকারীরা বলছেন, চকরিয়া জোনাল অফিসে এক ধরনের অদৃশ্য সুরক্ষা বেষ্টনী তৈরি করেছেন সুমন মৃধা। নিয়মিত ঘুষের টাকার ভাগ উর্ধ্বতনদের কাছে পৌঁছে যায় বলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে অভিযোগকারীরাই উল্টো হয়রানির শিকার হন।

স্থানীয় গ্রাহকরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ থেকে ন্যায্য সেবা পাওয়া এখন দুঃস্বপ্নের মতো। সংযোগ, মিটার, বিল- সবকিছুর জন্যই আলাদা খরচ করতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, বিদ্যুৎ পেতে হলে প্রথমে সুমনকে টাকা দিতে হয়। অভিযোগ করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বা অযথা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

চকরিয়া ও আশপাশের এলাকায় সুমন মৃধার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ প্রতিদিন ভারী হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বারবার লিখিত অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন, তবু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বরং অভিযোগকারীরা আশঙ্কা করছেন, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছায়ায় এই লাইনম্যানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়তো আর নেওয়া হবে না।

স্থানীয়দের মতে, চকরিয়া জোনাল অফিসে অভিযোগের শেষ নেই। ভুতুড়ে বিল, দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং গ্রাহক হয়রানি নিয়মিত ঘটনা। সরেজমিনে দেখা যায়, দৈনিক কয়েকশ গ্রাহক অভিযোগ জমা দেন, কিন্তু অধিকাংশই হতাশ হয়ে ফিরে যান। এছাড়া সেবা নিতে হলে ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইনম্যান সুমন মৃধা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তবে সাধারণ গ্রাহকরা কেন তার বিরুদ্ধে একের পর এক লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার মকবুল আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]