
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন,নভেম্বর নাগাদ অ্যাপ চালু হলে সেটি প্রবাসীদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আউট অফ কান্ট্রি ভোটিং (ওসিভি) বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন ও লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে অনলাইন মতবিনিময় সভার শুরুতে এসব কথা বলেন তিনি। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, ডিজি এনআইডি এ এস এম হুমায়ুন কবীরসহ ইসির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নেয়া উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোট বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তিন দফা বক্তব্যে ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চান, শুধু প্রতিশ্রুতি নয় বরং বাস্তবায়ন করবেন এবং এর জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি প্রয়োজন।
এরপর থেকেই নির্বাচন কমিশন প্রবাসী বোর্ড নিয়ে কাজ শুরু করে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা এবং ৪৪টি মিশন অফিস থেকে প্রাপ্ত মতামত-উপাত্ত সংগ্রহের পর কমিশন বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসপি সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় সম্পৃক্ত করা হয়। কমিশনার জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও প্রবাসী ভোট নিয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল—আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট এবং অনলাইন ভোটিং।
সানাউল্লাহ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী ভোটের ছয়টি প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইন-পারসন ভোটিং ও পোস্টাল ব্যালট। অনলাইন ভোটিং এখনো সীমিত মাত্রায় প্রচলিত। মাত্র দুটি দেশ সম্পূর্ণভাবে অনলাইন ভোটিং চালু করেছে। প্রক্সি ভোটিং, মোবাইল পোস্টাল ব্যালট ও ফ্যাক্স ভোটিংও কিছু দেশে চালু আছে। বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছিল পোস্টাল ব্যালট, প্রক্সি ভোটিং এবং অনলাইন ভোটিং—তবে আপাতত অনলাইন ভোটিং সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রক্সি ভোটের তেমন সমর্থন না থাকায় সেটি বাদ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “এবার ইনশাআল্লাহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন।” তবে বাস্তবতায় এর কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ছিল। ২০০৮ সালে লন্ডনে প্রথম আ লোচনার পর প্রবাসী ভোটের বিধান আনা হলেও এতদিন তা কার্যকর হয়নি। সময় সংকটের কারণে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনার সুযোগ তৈরি হয়নি। এজন্য এবার নতুন একটি হাইব্রিড সমাধান নেয়া হয়েছে। আগ্রহী ভোটাররা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করলে প্রতীক-সম্বলিত ব্যালট আগেই তাদের কাছে পাঠানো হবে।
তিনি জানান, ব্যালটে থাকবে প্রার্থীর প্রতীক। প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটাররা মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেখতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন। পরে তিনি ব্যালট ফেরত পাঠাবেন। এবারের ভোটে প্রবাসীদের কোনো চার্জ দিতে হবে না। যদিও প্রতিটি ভোটে সরকারের খরচ হবে প্রায় ৭০০ টাকা।
নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুটি ধাপে কাজ হবে। প্রথমে ভোটার নিবন্ধন—যারা ইতোমধ্যে এনআইডি কার্ডধারী, তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন। এরপর আউট অব কান্ট্রি ভোটিংয়ের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, যা নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চালু হবে। প্রতিটি অঞ্চলে ৭–১০ দিন সময় দেয়া হবে নিবন্ধনের জন্য, প্রয়োজনে অতিরিক্ত ৩–৭ দিন সময় রাখা হবে।
গ্লোবাল অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার মাত্র ২.৭% এবং এর মধ্যে ভোট সংগ্রহের হার ৩০% এর নিচে। তবুও বাংলাদেশের প্রবাসীরা অন্যদের তুলনায় বেশি আগ্রহী। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদেরও প্রত্যাশা সীমিত রাখতে হবে, তবে আমরা ব্যর্থ হব না।”
তিনি আরও জানান, পোস্টাল ব্যালটের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি হলো ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা এবং আরেকটি হলো আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ভোট বাতিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ডাকযোগে ব্যালট পৌঁছার ব্যর্থতার হার প্রায় ২৪%।
বক্তব্যের শেষে কমিশনার সানাউল্লাহ প্রবাসীদের অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এটা শুরু করতে হবে যে স্কেলেই হোক না কেন। আমরা চাই প্রবাসীরা শুধু আজ নয়, আগামীতেও আমাদের সাথে থাকবেন। যেন শুরুতেই আমরা ব্যর্থ না হই।” তিনি জানান, নভেম্বর নাগাদ অ্যাপ চালু হলে সেটি প্রবাসীদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর