
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মর্যাদা, যৌথ সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে একটি বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে, যাতে “কেউ পিছিয়ে না থাকে।”
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রথম দ্বিবার্ষিক টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন অর্থায়ন সংক্রান্ত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত অঙ্গীকারগুলো এখন বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তর করতে হবে।
“এটি সম্ভাবনা ও দায়িত্বে পরিপূর্ণ এক মুহূর্ত,” তিনি বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে প্রতিবছর প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হলেও অপরিহার্য।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। “বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য কখনোই কারও স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না,” তিনি বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, যখন নারীরা ব্যবসা শুরু করতে পারে, তরুণরা সৌর শক্তি ও প্রযুক্তির সুযোগ পায়, শিশুদের জন্য শিক্ষা, পুষ্টি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা হয় — তখনই প্রকৃত ও স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে।
তিনি সেভিল কমিটমেন্টকে একটি নতুন কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, অবৈধ অর্থপ্রবাহ রোধ, উন্নয়ন ব্যাংককে ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব।
এসডিজি অর্থায়নে পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমত ন্যায্যভাবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা দিয়ে তা শক্তিশালী করতে হবে। কর ব্যবস্থা হতে হবে প্রগতিশীল ও স্বচ্ছ এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোকে তাদের ন্যায্য অংশের কর দিতে হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় বৈষম্য দূর করতে হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হ্রাস করা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য প্রতিকূল হবে। বাংলাদেশ একদিকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, অন্যদিকে জলবায়ু সংকট ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে লড়ছে। “বিশ্বের সমর্থন বাড়াতে হবে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।
দ্বিতীয়ত, তিনি উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসার প্রসারে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, মিশ্র অর্থায়ন ও এমন প্রতিষ্ঠান যা মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করে সামাজিক সমস্যা সমাধান করে, তা কর্মসংস্থান, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রমাণিত মাধ্যম।
তৃতীয়ত, প্রফেসর ইউনূস বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো ও ঋণ ব্যবস্থার সংস্কারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেশি কণ্ঠস্বর দিতে হবে এবং ঋণকে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে, কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য নয়।
চতুর্থত, তিনি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, অবৈধ অর্থপ্রবাহ প্রতিরোধ ও নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। “মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা জানতে পারবে অর্থ কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারবে,” তিনি বলেন।
শেষে, তিনি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই আবাসন, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান।
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর