
গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের ভোটগণনা প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোটগণনা চলছে এবং গণনাস্থলে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট, প্রার্থী বা সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে ভোটগণনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং শিক্ষক-কর্তৃক পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভোটগণনা শুরু হলে বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন তোলেন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি চাইলে প্রশাসন তাতে রাজি হয়নি। পরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পাঁচজন সাংবাদিককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হলেও তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ১৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ছয়জন করে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন, যার মধ্যে চারজন পোলিং এজেন্ট, একজন গণনা পর্যবেক্ষক এবং একজন প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে কেন্দ্রে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট, প্রার্থী বা সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধার শিকার হওয়া বণিক বার্তার সাংবাদিক মেহেদী মামুন বলেন, "আমরা ভোটগ্রহণ দেখতে পেরেছি। কিন্তু এরপর ভোটগণনা শুরু হলে জানতে পারি, সেখানে কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। একাধিকবার অনুরোধ করার পরও ভোটগণনা কেন্দ্রের বাইরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।"
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ওপর ভরসা রাখতে বলা হলেও তাদের দাবি ছিল, পোলিং এজেন্ট না থাকলেও অন্তত সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হোক। ভিপি প্রার্থীও একই অভিযোগ করেন। এরপর ক্যাম্পাসের পাঁচজন সাংবাদিককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও বহিরাগত কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পরও কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা জানানো হয়নি। সাংবাদিকরাও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার শিকার হয়েছেন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তাহমিদ হাসান বলেন, "প্রাথমিকভাবে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ভোটার-প্রার্থীদের চাপের মুখে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) কর্মরত পাঁচজন সাংবাদিককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানেও করিডোরে সবাই অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে তথ্য নিচ্ছেন। ছবি তোলার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। গণনা সরাসরি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না, শুধু কেন্দ্র থেকে বের হওয়া ব্যালট বক্সগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
গকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী শেখ খোদার নুর ইসলাম বলেন, "নির্বাচন কমিশন আমাদের বলেছিল, নির্বাচন চলাকালে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যাবে না, যেহেতু প্রার্থী বেশি। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ভোটগণনা শুরু হয়, যেহেতু প্রার্থী কম, তখন আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যেতো। সেখানে দেখছি, শিক্ষকরা ভোটগ্রহণ করছেন। একজন প্রার্থীর ভোট আরেকজনের খাতায় গণনা হচ্ছে না, সেটা আমরা প্রার্থীরা নিশ্চিত করতে পারছি না। শিক্ষক যারা আছেন, তারা যে বায়াসড নয়, তা তো আমরা নিশ্চিত নই। কারণ বিগত সময়ে বিভিন্ন শিক্ষকের নামে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় দোসর হিসেবে কাজ করেছে, তারাও নির্বাচন কমিশনের অংশ হিসেবে কাজ করছে। ফলে কীভাবে নিশ্চিত হবো, কেন আস্থা রাখবো? আমার ভোট আমার খাতায় গণনা হচ্ছে কিনা সেটা জানা আমার অধিকার।"
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ড. ফুয়াদ হোসেন বলেন, "প্রতি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য ছয়জন শিক্ষক দায়িত্বে ছিলেন। তারাই ফলাফল গণনা করে তাদের স্বাক্ষরিত ফরমে কন্ট্রোল রুমে ভোটের ফলাফল জমা দেবেন। কন্ট্রোল রুমে সব ভোটের ফলাফল জমা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) চারটি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। ভোটকেন্দ্রে মোট ৫০ জন পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করেন।"
গকসুর নির্বাচন কমিশনার ডা. মো. জামিলুর রহমান বলেন, "ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন কেন্দ্রে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো এজেন্ট থাকবে না, এটা তাদের সাথে আগেই কথা হয়েছে। ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দেবো।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর