
জাতীয় পর্যায়ে ১০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার তাদের মোট আয়ের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্য কেনার জন্য। এছাড়া ৬২ শতাংশ পরিবার ব্যয় করে তাদের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ। ফলে তারা খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য প্রয়োজন মেটানের ক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যয় করতে পারে না। এটি খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে।
‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ফুড সিকিউরিটি সিচুয়েশন অ্যান্ড কোপিং ম্যাকানিজম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও বিবিএস সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আকতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মাসুদ রানা চৌধুরী। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মেহেনা তাবাসসুম। বক্তব্য দেন বিবিএস’র উপ-মহাপরিচালক ওবায়দুল হক।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ পরিবার নিয়মিত আয়রনসমুদ্ধ খাবার খেয়েছে। এছাড়া ৯ শতাংশ পরিবার জরিপ চলাকালীন সময় থেকে তার এক সপ্তাহ আগে কোনো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খায়নি। বরিশালে সবোর্চ্চ ১৯ শতাংশ পরিবার জরিপের সময় থেকে তার আগের সাত দিন শূন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে। রাজশাহী বিভাগে ২৬ শতাংশ পরিবার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রামীণ এলাকায় ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার এবং শহরের ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার খাদ্যের জন্য মোট আয়ের ৬৫ শতাংশ বা তার বেশি ব্যয় করে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোকে মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ খাদ্যের জন্য ৬৫ শতাংশ বা তার বেশি ব্যয় করে।
আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য লক্ষ করা গেছে। যেমন, ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ পরিবার তাদের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ বা তার কম ব্যয় করে। যেখানে সিলেট, রংপুর, রাজশাহী এবং ময়মমনসিংহে মাত্র ২৫-৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের মোট আয়ের ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করে খাদ্য কিনতেই। এ পরিস্থিতিতে উচ্চ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয়ভাবে ১০ জনের তিনজনের পরিবার দারিদ্র্যসীমার মধ্যে আছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় চারটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-খাদ্য নিরাপত্তাহীন মোকাবিলায় সামগ্রিকভাবে সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে অধিক গবেষণা প্রয়োজন। গ্রামীণভিত্তিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলেয়া আকতার বলেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও মোকাবিলার কৌশল এবং এর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুস্তরবিশিষ্ট সমস্যা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত ও সার্বিক পদ্ধতির প্রয়োজন। শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, পুষ্টি সম্পর্কে যথেষ্ট শিক্ষার ব্যবস্থা এবং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর