
নিপীড়ন বিরোধী জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে মহাসমাবেশ শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল উশৃংখল পাহাড়ি যুবক। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সামনে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে গাড়ির চালক আহত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায় একটি সেনাবাহিনীর গাড়ির দিকে ইট-পাটকেল, লাঠি-সোঁটা নিয়ে তেড়ে যায় পাহাড়ি যুবকরা। এসময় কোন কারণ ছাড়াই তারা সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ করে। এতে গাড়ির চালকের হাতে আঘাত লাগে এবং গাড়ির সামনের গ্লাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনা অত্যন্ত শান্তভাবে মোকাবিলা করে সেনাবাহিনীর এ টিম। এরপর সড়কের পাশে থাকা মোটরসাইকেলের গ্যারেজে হামলা চালায় এই উপজাতি যুবকরা। এসময় গ্যারেজের বড়-ছোট টায়ার নিয়ে যেতে দেখা গেছে ভিডিওতে।
এর আগে নিপীড়ন বিরোধী জুম্ম ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে শুনা যায়। তারা সেনাবাহিনীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালও দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে; গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক মারমা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় শয়ন শীল নামে একজনকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেফতার করে এবং বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রাখে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনগুলো। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেয় মারমা সম্প্রদায়ের একটি সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমা নামে এক যুবক। আর এ অবরোধ সফল করতে এতে পূর্ন সমর্থন ও সংহতি জানায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সহ তাদের অনুগত সহযোগী সংগঠনগুলো। অবরোধের নামে জেলা জুড়ে তান্ডব চালায় পিকেটাররা। এসময় ২টি ট্রাক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলও ভাংচুর করে তারা।
অবরোধ শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে মারমা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমাকে সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে আবার ছেড়ে দেয়। এরপর ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূলে সরাসরি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় উপজাতিরা। তাদের মহাসমাবেশ শেষে শনিবার পূর্ণ দিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেয় জুম্ম ছাত্র জনতা। এর প্রেক্ষিতে শনিবার সকাল ১০টায় সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা ও পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় খাগড়াছড়ির সর্বস্তরের জনগণ ও ছাত্রজনতা। এ নিয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে খাগড়াছড়িতে।
নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম থেকে সরকারি কাজ শেষে ফেরার পথে খাগড়াছড়ি সদরের মাইনী ভ্যালী এলাকা থেকে গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া শুরু হয়। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও একজন আহত হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, 'এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।'
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর