কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) মো. আশরাফ কবির ও তার সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম- দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত শুরু করেছে বেতার সদর দপ্তরের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
তবে এই তদন্ত কার্যক্রমকে ভুক্তভোগী শিল্পীরা ‘লোকদেখানো ও দায়সারা’ বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, প্রকৃত ভুক্তভোগীদের বক্তব্য না নিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আয়োজন চলছে। এ কারণে তারা সরাসরি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার বেতারের আরডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের খবর দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর পরদিনই আরেকটি প্রতিবেদনে উঠে আসে- ‘অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়লেন ১৫ শিল্পী-কলাকুশলী’। একই দিনে আরেকটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, ‘মন্ত্রীর পারিবারিক গাড়ির চালক বেতন নিতেন বেতার থেকে’। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কাজ না করেও টানা তিন বছর বেতন নিলেন সাবেক মন্ত্রীর গাড়ি চালক’। এছাড়াও এসবের বাইরে স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকেও কক্সবাজার বেতারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট চর্চা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এর পরই বেতার সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রুবাইয়াত শামীম চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বেতার সদর দপ্তর। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম এবং মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার মো. মাহমুদুন নবী।
গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কমিটির সদস্যরা কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রে এসে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
কিন্তু ভুক্তভোগী শিল্পীদের অভিযোগ- আরডি ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিয়েছেন কিংবা যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের কাউকে ডাকা হয়নি। পরিবর্তে অনুষ্ঠান থেকে বিরত রাখা কয়েকজন শিল্পী ও আরডির ঘনিষ্ঠ ডজনখানেক শিল্পী-কলাকুশলীর সাক্ষ্য নিয়েই দায়সারা তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠান ঘোষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রমটি আমাদের কাছে লোকদেখানো ও দায়সারা মনে হয়েছে। প্রকৃত ভুক্তভোগীদের বাদ দিয়ে আরডির পক্ষে সাফাই গাইতে পারে- এমন শিল্পীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’
সংগীত প্রযোজক ও শিল্পী দ্বীপলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘যারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ও চাকরি হারিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে তদন্ত হলে সেটি স্বচ্ছ হয় না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে।’
কক্সবাজার জেলা সংগীত শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরমান উল্লাহ বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি তদন্তের নামে অভিযুক্তদের বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও একই রকমের আয়োজন চলছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা চাই।’
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তথ্য ও সম্প্রদার উপদেষ্ঠা বরাবর পাঠানো আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সুপারিশে আশরাফ কবির কক্সবাজার বেতারে আরডি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি তার পিএ মোসলেহ উদ্দিন ( ২৮ জুলাই অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান), হিসাব সহকারী নুরুল আজিম, অনুষ্ঠান ঘোষক নাজমুল করিম জুয়েলসহ কয়েকজনকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এবং চার বছর ধরে নানা অনিয়ম- দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আবেদনে ইতিপূর্বে শিল্পীদের অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ১২ দফা অভিযোগ মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এর আগে গত ১৬ আগস্ট তথ্য উপদেষ্টা, বেতারের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আরডি আশরাফ কবির ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিল্পীরা। সাতজন শিল্পীর স্বাক্ষরে সেখানে সুনির্দিষ্ট ১২টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর