
বগুড়ার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু রেখে বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। দরপতনের কারণে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে আটকে গেছে। সরকার নির্ধারিত দামেও বিক্রি হচ্ছে না এবং পাইকাররা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী নন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় চাষিরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন। অনেকে হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। চাহিদার অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৩টি হিমাগার থেকে গত বছর এই সময়ে ৫০ শতাংশ আলু বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও কম বিক্রি হয়েছে। গত বছর আলু উৎপাদন করে চাষিরা ভালো মুনাফা পেলেও, এ বছর কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লোকসানের পাশাপাশি মজুত আলু নিয়ে হিমাগার মালিকরাও দুশ্চিন্তায় আছেন।
কৃষকরা বলছেন, হিমাগারে মজুতে ৬০ কেজির এক বস্তা আলুতে তাঁদের খরচ হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা। এর সঙ্গে হিমাগার ভাড়া ৪০০ টাকা যোগ করলে প্রতি বস্তায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মোট খরচ পড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা। পাঁচ মাস সংরক্ষণের পরও বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা বস্তা। হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়ে কৃষক পাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এই দামে আলু বিক্রি করে তাঁদের প্রতি বস্তায় প্রায় ৮৫০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
কয়েকজন পাইকার জানান, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম না থাকায় সরকারের নির্ধারিত দামে আলু কেনাবেচা সম্ভব হচ্ছে না। আলু কিনে ব্যবসায়ীরাও লোকসান গুনছেন। হিমাগারে মজুত থাকলেও সরকারি দামে বাজারজাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
শেরপুরের কৃষক আলী আজগর জানান, সরকার আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে সাড়ে ১২ টাকা থেকে সাড়ে ১৩ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম কম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন না। নির্ধারিত দামে বিক্রির পাশাপাশি হিমাগার ভাড়া কিছুটা কমানো হলে চাষিদের মূলধন কিছুটা হলেও রক্ষা পেত।
মাথাইল চাপর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু এবার লোকসান ঠেকাতে কোনো নজরদারি নেই। এই কৃষক ১০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৯০ মণ থেকে ১২০ মণ আলুর উৎপাদন হলেও দাম কম হওয়ায় তিনি আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখেছেন। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও আলুর দাম নেই। চাষিরা অর্ধেক মূলধন ফেরত পাবেন কিনা, সে বিষয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে আলুর আশানুরূপ দাম মেলেনি। গত বছর আলু চাষ করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ায় এ বছর আলুচাষি বেড়েছে। হিমাগারে কৃষকদের তুলনায় বেশির ভাগ আলু মজুত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
শেরপুর উপজেলার আলু ব্যবসায়ী আল আমিন হোসেন বলেন, প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা দরে দুই ট্রাক আলু কিনেছি। ঢাকার পাইকারি বাজারে পাঠানোর কথা ছিল, কিন্তু চাহিদা না থাকায় পাঠাতেও পারছি না। আলুর দাম কমে গেছে। কাঁচামাল বাইরে রাখাও সম্ভব নয়। লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে।
এগ্রো আর্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ বলেন, গত বছর এই সময়ে হিমাগারে আলুর রমরমা বেচাকেনা হয়েছে। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিক সবাই লাভবান হয়েছেন। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। দাম না থাকায় কৃষকরা হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না। ৬ মাস অতিবাহিত হলেও বাজার দরপতনে ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারেই আছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার বলেন, আলুর দাম কম হওয়ায় কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে আলুর ২২ টাকা মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর