
বগুড়ার শেরপুরে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে জনপ্রিয় করতোয়া গেটলক সার্ভিস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে অফিস, আদালত ও ব্যবসায়িক কাজে বগুড়াগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সোমবার ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের এই কর্মসূচির প্রতি বগুড়া জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দও একাত্মতা ঘোষণা করেন।
জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর (শুক্রবার) চারমাথা থেকে ছেড়ে আসা হান্নান পরিবহনের একটি বাস নিয়ম ভঙ্গ করে ধুনট মোড়ে যাত্রী না তুলে সরাসরি আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনালে যাত্রী তুলতে গেলে কাউন্টার মালিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বগুড়া জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আরিফুর রহমান মিলন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে হান্নান পরিবহনের এক স্টাফ তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মিলন ওই স্টাফকে চড় মারেন। এর জের ধরে পরদিন শনিবার হান্নান পরিবহনের ড্রাইভার ও স্টাফরা বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সামছুল হকের নেতৃত্বে বগুড়া রেলগেট ও সাতমাথা এলাকায় অবস্থানরত করতোয়া গেটলক সার্ভিসের তিন স্টাফ বাবু, আব্দুল বারিক ও শাহ আলমকে মারধর করেন এবং যাত্রী তোলায় বাধা দেন। ফলে করতোয়া গেটলক সার্ভিসের গাড়িগুলো যাত্রী ছাড়াই ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত রবিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় শ্রমিকেরা ঘোষণা দেন নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো গাড়ি রাস্তায় নামবে না। সোমবার সকালে শেরপুর থেকে বগুড়াগামী কোনো করতোয়া গেটলক সার্ভিস ছেড়ে যায়নি। এতে স্ট্যান্ডজুড়ে দেখা যায় হতাশ যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। যাত্রী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিদিন করতোয়া গেটলকে বগুড়া যাই। আজ সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। অফিসে সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি।
আদালতগামী যাত্রী সোলাইমান হোসেন বলেন, চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমাদের শহরের ভিতরের একটি মাত্র গাড়ি সার্ভিস দিত, তা করতোয়া এখন বন্ধ থাকায় অনেকে বিকল্প পরিবহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিএনজি, বাইরের বাস বা ট্রাক এবং ভাড়াকৃত মাইক্রোবাসে যেতে হচ্ছে। এতে করে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে আমাদের।
বগুড়া মোটর মালিক সমিতি শেরপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, শ্রমিকেরা দিন আনে দিন খায়। আমরা মালিকেরা চাই গাড়ি চলুক। কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তারা গাড়ি চালাবে না এটা স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন দ্রুত সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। বগুড়া জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আরিফুর রহমান মিলন বলেন, শ্রমিকেরা নিরাপত্তা চেয়েছে এটি ন্যায্য দাবি। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সার্ভিস চালু করবেন।
শ্রমিক-মালিক বিরোধের এই অচলাবস্থা দূর না হলে পরিবহন খাতে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় যাত্রীরা। তারা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করতোয়া গেটলক সার্ভিস পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর