• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৯ সেকেন্ড পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৫৪ বিকাল

কিশোরগঞ্জে হাসপাতালের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

প্রসূতিকে চার ঘণ্টা চিকিৎসকের অপেক্ষায় আটকে রেখে সিজারিয়ান অপারেশনের পর চিকিৎসার নামে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মৃত নবজাতকটি হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মো. নাজমুল ও মোছা. তামান্না আক্তার দম্পতির সন্তান। গত ৬ই অক্টোবর বিকেলে নবজাতক মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে এবং ওই দিন রাতেই প্রসূতির ভাই মো. হিমেল কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে ঘটনা এবং থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই মালিকপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়। এক পর্যায়ে গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে এ ব্যাপারে সালিশ দরবার বসে।

সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিছু টাকাভর্তি একটি খাম পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি দফারফা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় চলছে।

এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালের ট্রেড লাইসেন্স ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত কার্যক্রমের অনুমোদনের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। লাইসেন্স নবায়ন না করেই প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও 'ম্যানেজ' হওয়ার প্রবণতার কারণে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।

সিটিল্যাবে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অভিযোগকারী মো. হিমেল ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংদই গ্রামের জিল্লু মিয়ার ছেলে ও মৃত নবজাতকের মামা। থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রসূতি হওয়ার কারণে মোছা. তামান্না আক্তার বিগত দুই মাস ধরে পিত্রালয়ে ছিলেন। তাকে নিয়মিত চেকআপ করানো হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে গত ৬ই অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তামান্না আক্তারের প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় ডাক্তার না পেয়ে তাকে দ্রুত জরুরি চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার প্রাইভেট ক্লিনিক সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালটিতে প্রসূতি তামান্না আক্তারকে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তখন চিকিৎসক না থাকলেও অন্য কোনো ক্লিনিকে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে রোগীকে দেখার অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন চিকিৎসক ডেকে আনার পর ওই চিকিৎসক প্রসূতিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং বাচ্চা প্রসব করান।

বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চার অবস্থা ভালো না থাকার পরও ক্লিনিকটিতে বাচ্চাটিকে ভালো চিকিৎসা না করিয়ে এবং পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এমনকি বাচ্চাটির কাছে পরিবারের লোকজনদের যেতে না দিয়ে তারা কালক্ষেপণ করে। আস্তে আস্তে নবজাতকটি নিস্তেজ হতে থাকে। হাসপাতালের লোকজন যখন নবজাতকটিকে বাঁচানো সম্ভব না বুঝতে পারে, তখন পরিবারের লোকজনকে জানায়- 'আপনাদের বাচ্চার অবস্থা ভালো নয়।

আপনাদের বাচ্চাকে বাঁচাইতে হইলে তাড়াতাড়ি কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।' এই পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেটে পড়ে। পরক্ষণেই পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন, নবজাতকটি মারা গেছে। অভিযোগে বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের কর্তব্যের অবহেলা, গাফিলতি এবং ভুল চিকিৎসার জন্য নবজাতকটি মারা গেছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের লোকজন নানাভাবে চেষ্টা-তদ্বির করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে হাসপাতালের অফিস কক্ষে দরবার-সালিশ হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাসহ দুইজন রাজনৈতিক নেতা, একজন ব্যবসায়ী ও কয়েকজন সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে বিষয়টি দরবারের মাধ্যমে রফাদফা হয়। সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি খামে ভরে ৫০-৬০ হাজার টাকা মারা যাওয়া নবজাতকের পরিবারের লোকজনদের হাতে দিলেও তারা তা ফিরিয়ে দেন। তবে পর্দার অন্তরালে বিষয়টি দফারফা করতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নবজাতকের বাবা মো. নাজমুল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দরবারে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ক্ষমা চান। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন- তাদের স্টাফদের অবহেলা আছে। আমি তো আর আমার বাচ্চাকে ফেরৎ পাবো না। ক্ষমার উপরে তো কিছু নেই। হাসপাতালের গৌতম বাবু আমাদের একটা খাম দেন। আমরা নিচে এসে তা আবার ফিরিয়ে দেই।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. অভিজিৎ শর্মা বলেন, লিখিত অভিযোগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের কাছে আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।

ঘটনার বিষয়ে সিটিল্যাব হেলথ কেয়ার হসপিটালের ম্যানেজার শহীদ বলেন, দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে বিষয়টি শেষ হয়েছে। তবে তিনি মৃত্যু নিয়ে দফারফা হয় কি-না এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]