
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিটিআর) বিভাগের সাময়িক বরখাস্তকৃত শিক্ষক ও নীল দলের সদস্য সচিব ড. ফিরোজ কবিরকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। জুলাই আন্দোলনে জুমার নামাজ পড়তে বাধা প্রদান এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ক্যাম্পেইনে নেতৃত্বদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের নিচে পিটিআর বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
অবস্থান কর্মসূচিতে পিটিআর বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ড. ফিরোজ কবির স্যার পিটিআর বিভাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় তাদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, তাকে 'মব' তৈরি করে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা ড. ফিরোজ কবির স্যারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত এবং বিভাগে ‘আলো’ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এছাড়া বিভাগে শিক্ষক সংকট নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতার কথাও তারা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীরা ড. ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে বাধা প্রদানের অভিযোগকে অস্বীকার করে তা 'বানোয়াট' বলে দাবি করে।
তবে ভিন্ন মন্তব্যও পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ফিরোজ কবির স্যার নীল দলের সদস্য সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থনকারী কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম। এর বাইরে জুলাই বিপ্লবের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নামাজে বাধা প্রদান করাটা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই, শিক্ষার্থীদের জুমার নামাজ রাস্তায় পড়াসহ এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর আগেই ভাইরাল হয়েছিল। আমি শিক্ষার্থী হলেও এটির বিচার চাই।
পিটিআর বিভাগের অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে যবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তপু ইসলাম বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর মনে প্রশ্ন জাগে, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন আসে না? কেন দুর্নীতিগ্রস্ত রাঘব বোয়ালদের কখনো শাস্তির আওতায় আনা হয় না? হয়তো এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ধীরে ধীরে পাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, জুলাই আন্দোলনের সময় যে মানুষটা মসজিদে নামাজ পর্যন্ত পড়তে দেয়নি, যে ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ ও ভিডিও প্রমাণ স্পষ্টভাবে রয়েছে, সেই ঘটনাকেই বলা হলো “বানোয়াট”। কিন্তু যখন নিজের সঙ্গে অন্যায় ঘটে, তখন তারাই আবার দেশকে দোষ দেয়, বাঙালি জাতিকে গালি দেয়। আপনারা দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগের দোসরকে বাঁচাতে গিয়ে, পুরো শিক্ষার্থীদের কাছে ঘৃণিত হয়ে গেলেন। আশা করি আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ড. ফিরোজ কবিরকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই রিজেন্ট বোর্ড বরখাস্ত করেছে। এখানে কোনো 'মব' বা কোনো চাপে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একাডেমিক কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য পিটিআর বিভাগের চেয়ারম্যানকে পার্টটাইম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে পিটিআর বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০৮তম সভায় জুলাই আন্দোলনে জুমার নামাজে বাধা প্রদান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ক্যাম্পেইনে নেতৃত্বদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে নীল দলের সদস্য সচিব ড. ফিরোজ কবিরকে বরখাস্ত করা হয়।
সর্বশেষ খবর