
চড়া সুদের চাপ কমাতে তুলনামূলক সস্তা উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ সুদহার নামতে পারে ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্র অন্যতম। কিন্তু এই খাতে সুদহার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এটি সরকারের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। ফলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মতো কম সুদের উৎসকে মূল বিকল্প হিসেবে গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ সঞ্চয়কারী, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বয়স্ক নাগরিক ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের বড় অংশ আসে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়লেও সুদহার কমানো হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে এবং নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য এটি হবে চাপের।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, আইএমএফের শর্ত মেনেই সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদ কমাচ্ছে। তার মতে, এতে মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত হবে এবং বিকল্প বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকবে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে একাধিক স্কিমে ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমানো হয়েছিল। জানুয়ারিতে আরও ১ থেকে দেড় শতাংশ কমানো হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আরও কম লাভজনক হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার এখন প্রায় ৯.৫ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে সরকার তুলনামূলকভাবে কম খরচে সেখান থেকে ঋণ নিতে পারছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নিট ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, আর আগের অর্থবছরে তা ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা— যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
নতুন নিয়মে বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে— কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফা, বেশি বিনিয়োগে কম। এছাড়া ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে উৎসে কর ১০ শতাংশ, আর তার নিচে ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনাকে স্বস্তি দিলেও জনগণের সঞ্চয় প্রবণতা কমিয়ে দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর