
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান এখন এক ধরনের নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে সাকিবও নীরব থাকেন—যা নিয়ে সমালোচনা হয় দেশে ও প্রবাসে। কেউ বলেন, তিনি “নিরপেক্ষ” থেকে ভুল করেছেন, আবার কেউ বলেন, তার নীরবতাকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবু এই সময়েই আমেরিকার মাইনর লিগ ক্রিকেটে (MiLC) নতুনভাবে আলো ছড়িয়েছেন সাকিব। Cricbuzz-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আটলান্টা ফায়ারকে প্রথমবারের মতো শিরোপা এনে দিয়ে তিনি আবার খুঁজে পেয়েছেন “খেলার ভেতরের আনন্দ”। দলের কোচ মন্টি দেশাই বলেন, “সাকিবের ভেতরের শিশুটি যেন আবার বেরিয়ে এসেছে। সে ছিল হাসিখুশি, উদ্যমী এবং দলের সঙ্গে একাত্ম।”
আমেরিকায় সতীর্থদের সঙ্গে থেকেছেন একদম সাধারণভাবে—দুই তারকা হোটেল, একসঙ্গে খাওয়া, একসঙ্গে যাতায়াত। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “শেষ কবে এমন সাধারণভাবে থেকেছি, মনে পড়ে না।” দলের ব্যাটসম্যান সাগর প্যাটেল বলেন, “ও এমনভাবে মিশে গেল যে, মনে হচ্ছিল আমরা সবাই পুরনো বন্ধু।” এমনকি অনেক সময় নিজের ব্যাটের গ্রিপ অন্যদের দিতে চেয়েছেন, বলেছেন—“তোমরা পছন্দ করলে আমি এনে দেব।”
৩৭ বছর বয়স, চোখের ঝাপসা দেখা—এসব বাধা সত্ত্বেও প্রতিটি ম্যাচের আগে নিয়মিত অনুশীলন করেছেন সাকিব। শিগগিরই ফ্লোরিডায় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছেন তিনি চিকিৎসার জন্য।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন সাকিব। এতে সমর্থক ও সমালোচক উভয়ের প্রতিক্রিয়া আসে প্রবলভাবে। অনেকে তার নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। Cricbuzz-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মানুষের নানা ধারণা থাকতে পারে। কিন্তু আমি গুরুত্ব দিই আমার কাছের মানুষরা কী ভাবে। আমি জানি, তারা এভাবে ভাবে না।” তিনি আরও বলেন, “হয়তো মানুষ অন্য কিছু আশা করেছিল, কিন্তু আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। এখন ধীরে ধীরে সবাই বিষয়টা বুঝছে।”
২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় সাকিব সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নেননি। পরবর্তীতে দেশে সহিংসতা বাড়লে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেই সময়েই অনেকে তাকে “নীরব দর্শক” বলে সমালোচনা করেন। তবে প্রবাসে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন নতুনভাবে। “শোরুম আল হাসান” বলে যারা একসময় ব্যঙ্গ করত, তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন সাকিব। তিনি MiLC-এর শেষ পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন কম পারিশ্রমিকে, শুধু দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য।
প্রতিটি ম্যাচ শেষে ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, ছবি তুলেছেন, শিশু ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলেছেন। যেখানে কানাডায় এক ম্যাচে কিছু দর্শক তাকে তিরস্কার করেছিলেন, সেখানে আমেরিকায় FOBANA কনভেনশনে তার সই করা জার্সি পেতে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
Cricbuzz-এর প্রশ্নে সাকিব স্পষ্টভাবে বলেন, “না, আমি এখনো কোনো ফরম্যাট থেকেই অবসর নিইনি।” তিনি আশা করেন, একদিন শেষ ম্যাচটি খেলবেন মিরপুরে, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে—“এটা আমার চেয়ে ভক্তদের জন্য বেশি অর্থবহ হবে।”
রাজনীতি, বিতর্ক ও ভুল বোঝাবুঝির মাঝেও সাকিব আল হাসান এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নাম। শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে সমালোচনার ঝড় উঠলেও, যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো দিনগুলোয় তিনি যেন আবার খুঁজে পেয়েছেন নিজের হারিয়ে যাওয়া সাকিবকে—একজন ভুল বোঝা মানুষ, তবু অটল, অসমাপ্ত এবং অনুপ্রেরণাদায়ী।
সূত্র: Cricbuzz
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর