দীর্ঘ পঁচিশ দিন ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকে থাকা ভারতীয় তিনটি ট্রাকে অবশেষে ধরা পড়েছে ঘোষণাবহির্ভূত কোটি টাকার ব্লেড কারসাজি।
বুধবার (২২ অক্টোবর) দিনব্যাপী বন্দরের ৪২ নম্বর শেডে পণ্য আনলোড ও পরীক্ষণের সময় মিলেছে ১০ লাখ ৮০ হাজার পিস ব্লেড ও অতিরিক্ত তিন প্যাকেজ অঘোষিত পণ্য। একদল কর্মকর্তার সমন্বয়ে পরীক্ষণের নেতৃত্ব দেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সাকিব রায়হান।
জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর আশিকুল ইসলাম অ্যান্ড সন্স নামে এক আমদানিকারক ভারত থেকে ৩০,৮৩৮ কেজি ওজনের 'স্টিল আইটেম অ্যান্ড আদার্স' ঘোষণায় তিনটি ট্রাকে পণ্য আনেন। ম্যানিফেস্ট নম্বর: ৬০১/২০২৫/০০৩/০০৬১২৪৭/০৯। ট্রাক নম্বর: ডব্লিউবি ০২সি-৫৯২১, ডব্লিউবি ৩৩ডি-১০২৭ ও ডব্লিউবি ১১সি-৩১৩৩। এই চালানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিলেন হুদা ইন্টারন্যাশনাল।
একই দিনে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে জানায়, এই চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আনা হয়েছে। এরপর ট্রাকগুলো আটক করা হলেও পরীক্ষায় বিলম্ব ঘটে টানা পঁচিশ দিন।
বুধবার পরীক্ষায় দেখা যায়, ঘোষণায় উল্লেখিত স্টিল পণ্যের সঙ্গে পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৮০ হাজার পিস ব্লেড ও অতিরিক্ত তিনটি প্যাকেজে অঘোষিত পণ্য। এতে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
বেনাপোল বন্দরের ৪২ নম্বর শেড ইনচার্জ আমিনুর রহমান জানান, তাঁদের রেকর্ড অনুযায়ী ট্রাকগুলো ঘোষণাপত্রে 'স্টিল আইটেম অ্যান্ড আদার্স' হিসেবে উল্লেখ ছিল।
কিন্তু স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মূল ডকুমেন্টটি পরবর্তীতে পরিবর্তন করে নতুন (জাল ডকুমেন্ট) নথিতে ৯ লাখ ব্লেড দেখানো হয়। সেখানে আবার বাস্তবে পাওয়া গেছে তারও বেশি—১০ লাখ ৮০ হাজার পিস।
বন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এনএসআইয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্যে এমন জালিয়াতি ধরা পড়লেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পঁচিশ দিনের দীর্ঘ নীরবতা ও বিলম্বে পরীক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। এখানে কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে পঁচিশ দিন ধরে আমদানিকারককে সময় দিয়েছেন পুরোনো নথি গায়েব করে নতুন নথি তৈরির জন্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোলের এই ঘটনা কেবল একটি চালান নয়—এটি কাস্টমস প্রশাসনের ভেতরকার অসাধু কিছু কর্মকর্তার বহুদিনের অনিয়ম, দুর্বলতা ও দায়হীনতার নগ্ন প্রতিচ্ছবি, যা সরকারের রাজস্ব নিরাপত্তার জন্য বড় সতর্কসংকেত।
বিষয়টির সর্বশেষ জানতে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সাকিব রায়হানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর