একসময়ের জায়ান্ট শাওমি (Xiaomi) ভারতের মোবাইল ফোনের বাজার থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে দেশটির সেরা ২৫টি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তালিকা থেকেও বাদ পড়েছে এই চিনা সংস্থা। শুধু তাই নয়, যে শাওমি ২০১৩ সালে এমআই-৩ মডেল দিয়ে ‘ফ্ল্যাশ সেল’ (Flash Sale) শব্দটির জন্ম দিয়েছিল, ভারতে তাদের কর্মীসংখ্যা এখন হাজারেরও নীচে নেমে এসেছে।
শাওমির উত্থান ছিল অনেকটা উল্কার মতো। এমআই-৩ মডেলের নজরকাড়া সাফল্যের পর রেডমি নোট-৩, নোট-৪ এবং নোট-৫ সিরিজ দিয়ে বাজার মাতিয়ে রেখেছিল তারা। ২০১৭ সালে স্যামসাংকে টপকে শাওমি ভারতের এক নম্বর স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে।
*পতনের শুরু যেভাবে:* ২০২০ সালে কোভিড অতিমারি শাওমির ব্যবসায় প্রথম বড় ধাক্কা দেয়। বিশ্লেষকরা প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলেন, বিশ্বজুড়ে চিপ বা সেমিকন্ডাক্টরের অভাব এবং কাঁচামালের সরবরাহ শৃঙ্খল নড়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। কিন্তু অতিমারি শেষ হতে না হতেই শাওমির বিরুদ্ধে ওঠে আর্থিক তছরুপের মারাত্মক অভিযোগ। তদন্তে নামে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং আয়কর দফতর। ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বছরে চিনা সংস্থাটির ৪৭০০ কোটি রুপি ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করে কেন্দ্র সরকার। এর ফলে ভারতে ব্যবসা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে তাদের জন্য।
*হারানো বিশ্বাস ও গুণগত মানের সংকট:* বিশ্লেষকদের দাবি, গত দু’বছরে এই সুযোগে প্রতিযোগিতার বাজারে অপো, ভিভো এবং রিয়েলমির মতো সংস্থাগুলো দ্রুত শাওমির জায়গা দখল করে নেয়। গ্রাহকদের ‘সস্তায় ভাল ফোন’ দেওয়ার যে সুনাম শাওমি অর্জন করেছিল, তা তারা হারাতে শুরু করে। এবং বাজার ধরে রাখতে শাওমির সহযোগী সংস্থা ‘পোকো’ (Poco) কিছু ফোন আনলেও তা গ্রাহকদের মন জয় করতে পারেনি। উল্টো, পোকো এবং শাওমি উভয় ফোনেই দ্রুত মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ডিসপ্লেতে সবুজ রেখা (গ্রিন লাইন) চলে আসার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয় বলে ব্যবহারকারীরা অভিযোগ তোলেন।
*প্রিমিয়াম হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা:* বিক্রির সূচক যখন তলানিতে, তখন শাওমি প্রিমিয়াম শ্রেণির ফোন বাজারে এনে ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা করে। কিন্তু এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ‘শাওমির ফোন সস্তা, তাই এর গুণগত মান খারাপ’-এই ধারণাটিই সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে গেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সংস্থাটিকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে আরও বেশি নজর দেওয়া, আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো এবং ব্যাপক প্রচারের ওপর জোর দিতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর