ঢালিউডের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালত তার মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নায়কের অকাল মৃত্যুর রহস্য আজও ঘিরে রেখেছে ভক্তদের মনে নানা প্রশ্ন। মৃত্যুর আগের দিনটি কেমন ছিল— তা নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনার শেষ হয়নি।
সালমান শাহর মৃত্যুর আগের দিন অর্থাৎ, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। সেদিন সারাদিনই ব্যস্ত ছিলেন তার নতুন ছবি ‘প্রেম পিয়াসী’–র ডাবিং নিয়ে। কাজ চলছিল এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সহ-অভিনেত্রী শাবনূর। শুটিং স্পটজুড়ে ছিল হাসিঠাট্টা আর খুনসুটিতে ভরা পরিবেশ। তবে আনন্দের আড়ালেই যেন লুকিয়ে ছিল অদৃশ্য অস্থিরতা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, দুপুরের দিকে সালমান শাহ বাবাকে ফোন করে অনুরোধ করেন তার স্ত্রী সামিরাকে এফডিসিতে নিয়ে আসতে। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বশুর সামিরাকে নিয়ে উপস্থিত হন সাউন্ড কমপ্লেক্সে। সেখানে ঢুকেই সামিরা দেখেন, সালমান ও শাবনূর ডাবিং রুমে মজা করছেন।
সেই সময়ের বিনোদন পত্রিকাগুলোতে দুজনকে নিয়ে প্রকাশিত নানা গুঞ্জন ও লেখা সামিরার মনে ক্ষোভের জন্ম দেয়। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণ পর দ্রুত এফডিসি থেকে বেরিয়ে আসেন।
সালমানের বাবা চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। সামিরা গাড়িতে ওঠেন, আর বিষয়টি বুঝতে পেরে সালমান ও পরিচালক বাদল খন্দকারও একই গাড়িতে বসেন। কিন্তু পুরো পথেই সামিরা সালমানের সঙ্গে কথা বলেননি। বাদল খন্দকার চেষ্টা করেও দুজনের মধ্যে কোনো কথাবার্তা করাতে পারেননি।
গাড়ি যখন এফডিসির মূল ফটকে পৌঁছায়, সালমান গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। বাদল খন্দকারও নামেন। দুজন কিছুক্ষণ আড্ডা দেন গেটের সামনে। তারপর সালমান আবার ডাবিং রুমে ফিরে গেলেও সেদিন আর কাজ হয়নি।
রাত ১১টার দিকে বাদল খন্দকার সালমান শাহকে তাঁর নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন। তারপরই যেন সবকিছু থেমে যায়। পরদিন সকালেই ছড়িয়ে পড়ে সালমান শাহর মৃত্যুর খবর— যে খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো দেশকে।
পরিচালক শাহ আলমসহ ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে সালমান ছিলেন প্রবল মানসিক চাপে। পারিবারিক টানাপোড়েন, প্রযোজকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, এমনকি এক সময় শিল্পী সমিতির নিষেধাজ্ঞাও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।
সালমান শাহ মাত্র চার বছরে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ঢালিউডে তৈরি করেছিলেন এক অনন্য ইতিহাস।
তার মৃত্যুর ২৯ বছর পর, আদালতের নতুন নির্দেশে সেই রহস্যময় মৃত্যুর তদন্তে আবারও আলো জ্বলেছে— হয়তো এবার জানা যাবে, ঠিক কেমন ছিল সেই রাতের শেষ মুহূর্তগুলো, যখন থেমে গিয়েছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের জীবনযাত্রা।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
বিনোদন এর সর্বশেষ খবর