মাত্র ২৩ দিনের ব্যবধানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পাঁচজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এর মধ্যে তিনজন বর্তমান ও দুজন সাবেক শিক্ষার্থী।
তারা হলেন— ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০০৮–০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবুল কালাম এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫–০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মানজুরা আক্তার। এ সময় মানজুরা আক্তারের সঙ্গে তার ১০ বছরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকাও মারা যায়।
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান গত ৩ অক্টোবর মারা যান। পুরান ঢাকার স্টার কাবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। এরপর দলের নেতাকর্মীরা তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসিবুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৮ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জানা যায়, সানজিদা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন এবং ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সানজিদা ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা।
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন ১৯ অক্টোবর টিউশন করাতে গিয়ে নিহত হন। পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নুরবক্স লেনের ১৫ নম্বর রৌশান ভিলা নামের বাসায় টিউশন করাতে গিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। পুলিশ জানায়, বর্ষা ও তার প্রেমিক মাহির ২৫ দিন আগে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে তারা জোবায়েদকে অন্ধকার সিঁড়ির নিচে ডেকে নিয়ে যায় এবং মাহির ও তার বন্ধু আয়লান মিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫–০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মানজুরা আক্তার ২৪ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। জানা যায়, শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সুনামগঞ্জ–সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারসংলগ্ন ইনাতনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিসিআইসির ১১ কর্মকর্তা পরিবারসহ ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী সেঁজুতি ট্রাভেলসের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। খাদে উল্টে পড়া বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মানজুরা আক্তার ও তার দশ বছরের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০০৮–০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবুল কালাম ২৬ অক্টোবর নিহত হন। রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড (স্প্রিং) ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে, ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মেট্রোরেলের ৪৩২ ও ৪৩৩ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়া বিয়ারিং প্যাডটি আবুল কালামের ঘাড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুটপাথে লুটিয়ে পড়েন। তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শরীর নিথর হয়ে যায়। এরপর সেই বিয়ারিং প্যাডটি পাশের একটি দোকানের কাঁচ ভেঙে ফেলে। এতে দোকান মালিক আমির আহত হন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মাত্র ২৩ দিনের ব্যবধানে পাঁচ শিক্ষার্থীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জবি দিবস উপলক্ষে করা আলোকসজ্জাও খুলে ফেলা হয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর