বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও আমার বিএনপি পরিবার এর প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এ সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সেই স্বাক্ষরের কাগজটি যখন চূড়ান্তভাবে জমা দেয়া হলো। সেখানে দেখা গেল বিএনপি যেটি স্বাক্ষর করেছেন সেই পাতা নেই। সেখানে অন্য পাতা যুক্ত হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা সবাই ডক্টর ইউনূসকে সম্মান করি। তিনি একজন গুণীজন, তার নেতৃত্বের সরকার বিএনপির সহ আন্দোলনরত সব দল সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তার গঠন করা কমিশনের মধ্য থেকে এই ধরনের প্রতারণামূলক কাজ হবে এটা জনগণ প্রত্যাশা করে নাই। এখানে প্রায় ৪৭ থেকে ৪৮ টি জাতীয় জুলাই সনদের ধারা আছে । যে ধারাটি আইনিকরণ করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা আশা করছি সরকার এবং তার সাথে যারা কাজ করছেন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে।
তারেক রহমান এর নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামের জন্মান্ধ আব্দুল গফুর মল্লিকের সাথে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আমল থেকে এখন হয়তো আমরা কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করছি। কিন্তু সামগ্রিক স্বাধীনতার বিষয়টি হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কিনা, কোন কারিগরি হবে কিনা বা কোন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কিনা। এই কথাগুলো কিন্তু আলোচনা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপি পরিবার তারেক রহমান সৃষ্টি করেছেন। সারা বাংলাদেশে আমরা ঘুরছি এবং একটি রাজনৈতিক দলের সামাজিক দ্বায়িত্ব হিসাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। অনলাইনের মাধ্যমে জন্মান্ধ গফুরের কথা জেনেছেন তারেক রহমান। তার নির্দেশে আজ রাজবাড়ীর প্রত্যান্ত অঞ্চলের জন্মান্ধ এই গফুর মল্লিকের বাড়ীতে আমরা বিএনপি পরিবার এসেছি। গফুরকে তারেক রহমান এবং তার শাশুড়ি কিছু সহযোগিতা করেছেন। তিনি যেন একটা ঘর বানিয়ে এবং তার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারেন এজন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহযোগিতা নিয়ে আমরা তার কাছে এসেছি।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এর নির্দেশে আজ রাজবাড়ীর জন্মান্ধ আব্দুল গফুর মল্লিকের বাড়ীতে এসেছেন আমরা বিএনপি পরিবার সংগঠনের সদস্যরা।
এতে আমরা বিএনপি পরিবার এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন সহ সংগঠনটির উপদেষ্টা, সদস্য সচিব, সদস্য এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডঃ আসলাম মিয়া, সাবেক জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশিদ, পাঁচুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান রতন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম রোমানসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা জন্মান্ধ নিঃসন্তান গফুর-নুরজাহান দম্পতির সার্বিক খোঁজ-খবর নেন এবং ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসাবে নগদ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন গফুর মল্লিকের হাতে।
জন্মান্ধ গফুর মল্লিক বলেন, আল্লাহ রতমত দিয়েছে বলেই আজ তারেক জিয়া আমার জন্য টাকা পাঠায়ছে। এটা আমার সৌভাগ্য। আমি চাই ধানের শীষ নিয়ে উনি যেন বিজয়ী হয়। গাড়ীতে গাড়ীতে নাড়ু বিক্রি করছি, হয়তো ওই ভিডিও দেখে আমার কাছে আসছে। এই টাকার মধ্যে থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কিছু মালামাল কিনবো। আর দেড় লাখ টাকা দিয়ে জমি রাখবো।
জানাগেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “জীবনের শেষ প্রান্তে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অন্ধ গফুর” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এর নজরে আসে। পরে তিনি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনকে আব্দুল গফুর মল্লিকের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ৭৮ বছর বয়সী আব্দুল গফুর মল্লিক জন্মান্ধ। দাম্পত্য জীবনে তার নাই কোনো সন্তানাদি। বড় ভাই কেরামত মল্লিকের ছেলে বাতেন মল্লিককে নিজের ছেলের মতো করে লালন-পালন করেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলে দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে নিজের উপার্জন দিয়ে চলতে শুরু করেন আব্দুল গফুর। এ বয়সেও তিনি দরাজ কণ্ঠে নারিকেলের নাড়ু, টেস্টি হজমি, চকলেট, বাদাম ভাজা বলতে বলতে টিনের বাক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গ্রামে। কখনো কখনো তাকে এসব বিক্রি করতে দেখা যায় ট্রেনেও। বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে গফুর মল্লিকের শরীর। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। কিছুটা পথ হাঁটতে তার সময় লাগে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর