মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী। দীর্ঘদিন ধরে এ নদীর দুই পাড়ের মানুষ যোগাযোগ সংকটে ভুগছে। ডিঙ্গি নৌকার পারাপারই তাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে এই যাতায়াত আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে।
সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্লা গ্রামকে বিভক্ত করেছে এই ধলেশ্বরী নদী। নদীর দক্ষিণ পাশে রাইল্লা, জান্না, কান্দাপাড়া, ফুকুরহাটি এবং কৃষ্টপুর গ্রাম অপরপাশে রাইল্লা এলাকার অংশ বিশেষ এবং সদর উপজেলার উকিয়াড়া এলাকা। সেতু নির্মাণ হলে দু পারের প্রায় অর্ধ লক্ষ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ সুবিধা পাবে। পাশাপাশি সাটুরিয়া উপজেলা থেকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় তিন চাকা এবং চার চাকার যানবাহন যানজটহীন ভাবে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
স্থানীয়দের দাবি, এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই পেশা হিসেবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। ধলেশ্বরীর ওপর এই সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের কৃষি এবং কৃষকের ভবিষ্যৎতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। গতি আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। দীর্ঘদিনের সেই প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খানম রিতা শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনকালে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন।
এ সময় আফরোজা খানম বলেন, নদী বিভক্ত এই এলাকার মানুষ বহু বছর ধরে অবহেলিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই হবে উন্নত জীবনের চাবিকাঠি। সেতু নির্মিত হলে কৃষকরা সহজে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে পারবে, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে। এই অঞ্চলের মানুষের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা সবক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটবে।
স্থানীয় কৃষক ও জনসাধারণ রিতার এই প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে এলাকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দ্রুত এই সেতু নির্মাণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য তার প্রতি আশা রাখেন এলাকাবাসী।
ষাট ঊর্ধ্ব বয়সী মোয়াজ্জেম আলী। তিনি পেশায় একজন কৃষক। তার সাথে কথা বলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার জমি উর্বর এখানে ভালো ফসল হয়। ফসল নিয়ে হাটবাজারে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত রাস্তা ও যানজটে আমাদের বাড়তি ভাড়া এবং বেশি সময় লাগে। এই সেতু হলে শহরের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এতে করে আমরা আর অবহেলিত থাকবো না। দুই যুগ ধরে শুনতেছি– এইখানে একটা সেতু হবে এখনো হয় নাই। মরার আগে এই সেতু দেইখা যাইতে চাই।
একই ধরনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কৃষক আজগর মিয়া বলেন, আমরা যারা মাঠে ফসল ফলাই, তারা অনেক কষ্ট করে এই নদী পার হয়ে হাটে যাই। নৌকা না থাকলে আমাদের দিন কাটে নদীর পাড়ে বসে। সেতু হলে আমরা নিজের গাড়িতে করে পণ্য বাজারে নিতে পারবো। এতে খরচ কমবে, লাভও বাড়বে।
স্কুল শিক্ষক হযরত আলী বলেন, এই এলাকার অনেক শিক্ষার্থী বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে পারে না। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এটা বড় কষ্টের। সেতু হলে তাদের যাতায়াত নিরাপদ হবে, অভিভাবকেরাও নিশ্চিন্ত থাকবেন। শিক্ষার হারও বাড়বে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিম মোল্লা বলেন, রাইল্লা ও ঢাকুলী এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এটি। যদি এই সেতু হয়, তাহলে আমাদের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা সবক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটবে। এটি শুধু যোগাযোগ নয়, মানুষের জীবনমান বদলে দেবে।
মানুষের দীর্ঘদিনের এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয়রা। তারা আশা প্রকাশ করেন, রিতার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পাবে এবং অচিরেই ধলেশ্বরীর বুকে গড়ে উঠবে একটি স্বপ্নের সেতু।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর