জুলাই–আগস্টের বিপ্লববিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৯ জন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। বহিষ্কৃত শিক্ষকদের সমর্থনে একের পর এক আন্দোলনে নামছেন তাদের অনুসারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে এসব আন্দোলনের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, সমন্বয়করা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা ও আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলনের বিরোধিতা করে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম’। এ মিছিলে যে শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে জুলাই বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিল করে প্রশাসন।
এর পরপরই বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন তাদের মদদপুষ্ট শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত এসব শিক্ষকদের পক্ষে আন্দোলনে নেমেছে আইন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ইংরেজি ও আল ফিকহ অ্যান্ড লসহ কয়েকটি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীও আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বহিষ্কৃত শিক্ষকরা নিজেদের রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সুকৌশলে ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে বিভাগগুলোর সুবিধাভোগী কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী নবীনদের ভয়-ভীতি ও বিভ্রান্তির মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যানারে আন্দোলনে নামাচ্ছেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম) ও মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষককে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন বিভাগ দুটির শিক্ষার্থীরা। এরআগে গতকাল একই স্থানে আইন বিভাগের দুই শিক্ষককে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরে জুলাই বিরোধী শক্তির আস্ফালনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন অন্য শিক্ষার্থীরা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক ইয়াসিরুল কবীর সৌরভ, গোলাম রব্বানী, ছাত্রদল নেতা নূর উদ্দিন, রাফিজ, শিবির নেতা রায়হান নেজামীসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এসময় তারা বলেন, “প্রশাসন কিছু শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে। তবে আমরা দেখতে পারছি, একটি দালাল চক্র তাদের পক্ষ অবলম্বন করছে। ছাত্রসমাজ এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে। ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত, সাবেক প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এইচআরএম ও মার্কেটিং বিভাগের মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বহিষ্কৃত শিক্ষকদের জুলাইবিরোধী ভূমিকা অস্বীকার করে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা বলেন, তাদের বহিষ্কার করা হলে বিভাগ একাডেমিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা দরকার। আমাদের উদ্দেশ্য ফ্যাসিস্টদের পক্ষে দাঁড়ায়নি, আমরা বিভাগের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। ”
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘‘অভিযোগ আনা হচ্ছে, ৪ আগষ্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্যাররা নাকি সমাবেশ করেছেন। তবে ওই প্রোগ্রামটি ইনডোর প্রোগ্রাম ছিল। তারা যদি সত্যিই আমাদের বিরোধিতা করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের আন্দোলনে বাধা দিতেন বা ক্লাসে চাপ সৃষ্টি করতেন। প্রশ্ন হলোÑ৫ আগষ্টের তারিখের আগে কি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল? তাঁর দল (আওয়ামীলীগ) কেন্দ্র থেকে যদি কোনো নির্দেশনা দেয়, তাতে তিনি অংশ নিতে বাধ্যÑএটাই স্বাভাবিক। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশে ভিন্ন রাজনৈতিক মত থাকতে পারে। জুলাই গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড হাসিনাকে কি শাস্তি দেওয়া হয়েছে? শেখ হাসিনা এখন কোথায়?
তারা আরো বলেন, আমাদের দাবিÑসাজিদ হত্যার মত বড় ঘটনার বিচার আগে করা হোক, তারপর এসব ঘটনার বিচার করা যেতে পারে। আপনার কি ৪ আগষ্টের একটি মিছিলের জন্য তাঁকে ফাঁসির মতো শাস্তি দিতে চাচ্ছেন? এত শিক্ষার্থী যার সমর্থনে দাঁড়িয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁর কিছু ‘ফেস ভ্যালু’ আছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর