গণঅভ্যুত্থানের পনেরো মাস পেরিয়ে গেলেও জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়া জুলাই যোদ্ধা সামিউল আজিমের বিচার করেনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েও বিচার না পেয়ে নিভৃতে কাঁদছেন তিনি। পনেরো মাসেও গঠন করেনি কোনো তদন্ত কমিটি। জুলাইয়ে যবিপ্রবিতে নির্যাতনের ঘটনায় বিচার করতে না পারাকে ড. মজিদ প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।
সামিউল আজিম যবিপ্রবির ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কিনা, কমিটির সদস্য কারা ও প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কিনা ও কোনো অবস্থা-ই জানেন না যবিপ্রবি উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সামিউল আজিমের নির্যাতনের ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি।
ভূক্তভোগী যবিপ্রবি শিক্ষার্থী সামিউল আজিমের বরাতে জানা যায়, চব্বিশের ১৫ জুলাই আন্দোলন শেষে সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের নিজ কক্ষে (কক্ষ নং: ৪২২) সামিউল অবস্থান করে, কিছু সময় পর চারজন ছাত্রলীগ কর্মী শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের কামরুল হাসান শিহাব, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাকিব হাসান ও মনিরুল ইসলাম রিদয় ও ফার্মেসি বিভাগের ফাহিম মোরশেদ তার কক্ষে প্রবেশ করে। এরপর চারজন মিলে সামিউলকে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়। জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময় নতুন প্রশাসনের কাছে সামিউল লিখিত অভিযোগ দিলেও, দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয় নি বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সামিউল আজিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসলে তৎকালীন প্রক্টর ইঞ্জি. ড. মোঃ আমজাদ হোসেন স্যারের কাছে আমার উপর নির্যাতনের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু অভ্যুত্থানের এত মাস পরও আমি এখনো কোনো বিচার পাইনি। আমিই শুধু ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি এমন না, আরও অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে আমার অভিযোগের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায়, অনেকেই সামনে এসে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না।
তামিম আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দুই হাজার শহীদের রক্ত ও হাজার হাজার আহত মানুষের রক্তের উপর দিয়ে আসা প্রশাসনের কাছে আশা ছিল অন্তত আমরা ন্যায় বিচার পাব, সকল নির্যাতন ও অনিয়মের বিচার হবে ৷ কিন্তু সামিউলের উপর নির্যাতনের ঘটনা ও অপরাধে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচার করতে না পারা যবিপ্রবি প্রশাসনের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট । প্রশাসন শুধু আমাদেরকে আশ্বাসের নামে মূলা ঝুলিয়ে দেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ উমর ফারুক বলেন, অভিযোগ দেওয়ার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অভিযোগটি রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে কিছু জানি না। এই ব্যাপারে জেনে আমরা পদক্ষেপ নিবো।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে যবিপ্রবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিত্যানন্দ পাল বলেন, প্রক্টর অফিস থেকে এ অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো প্রস্তাব আসেনি। তাই কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
এ ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন ও সদস্যের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবীব বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের, তাই এখন কিছু বলতে পারছিনা। ফাইল খুলে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।
সামিউল আজিমের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন ও বিচারের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, অভিযোগটির ব্যাপারে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো এর অগ্রগতি কতটুকু। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর