চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ গার্লস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা শাহিনুর আক্তার শ্যামলীর একটি মন্তব্য দেশের শিক্ষক আন্দোলনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি দাবি করেন, পর্যাপ্ত বেতন–ভাতা না থাকায় শিক্ষকরা ন্যূনতম প্রয়োজনও ঠিকমতো মেটাতে পারেন না। বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য ২০ বছর আগে একটি ফার্মের মুরগি কিনেছিলাম। আমরা শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। একটি দেশি মুরগি কেনার সামর্থ্য আমাদের থাকে না।” তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তা ঘিরে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। স্থানীয় সূত্র এবং শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে অনেকে দাবি করেন, ব্যক্তিগতভাবে শাহিনুর আক্তার মোটেই অসচ্ছল নন। পারিবারিকভাবে তুলনামূলক সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও তিনি ‘দেশি মুরগি খেতে পারেন না’—এমন দাবি করায় প্রশ্ন তোলা হয় বক্তব্যের বাস্তবতা নিয়ে।
স্থানীয়দের মতে, শ্যামলীর বড় ভাই কর্মরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট বোনও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোডে তার ও বোনের মালিকানায় একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একটি বিউটি পার্লারও পরিচালনা করেন। শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লা বড়ুয়াতেও তাদের পরিবারের একটি দোতলা বাড়ি আছে। তার স্বামী কুমিল্লার একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, দুই সন্তানের মধ্যে বড়জন ঢাকায় কলেজে পড়ছেন এবং ছোটজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।
সমালোচনার মুখে শাহিনুর আক্তার শ্যামলী জানান, তার মন্তব্যটি ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থা নিয়ে নয়। তিনি সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা ও সীমাবদ্ধতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। তার দাবি, দেশের শিক্ষকরা যে সম্মান ও সুবিধা পাওয়ার কথা, বাস্তবে তা পান না—এই বাস্তবতাই তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন–ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতি, টাইম স্কেল ও বিভিন্ন বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত কয়েক দিন ধরে অনড় অবস্থান নিয়ে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরছেন শিক্ষকরা। এই আন্দোলনের মাঝেই শ্যামলীর বক্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর