রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে ড্রাম থেকে খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে নিহত আশরাফুল হকের বোন আনজিনা বেগম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এতে নিহত আশরাফের বন্ধু জরেজকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহের সামনের সড়ক থেকে দুটি নীল রঙের ড্রামে খণ্ডিত অবস্থায় আশরাফুল হকের (৪৩) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনদিন আগে জরেজ মিয়া (৪১) নামের বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় এসে খুনের শিকার হন আশরাফুল।বর্তমানে তার ফোন নিয়ে পলাতক রয়েছেন সেই জরেজ মিয়া।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাইকোর্ট এলাকায় নীল রঙের ড্রামের ভেতরে আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।পরে ৭টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে সিআইডির টিম মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে।
আশরাফুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরের গোপালপুর নয়াপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আ. রশিদ।
আশরাফুল ছিলেন একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। তিনি হিলি থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি বিক্রি করতেন বলে জানা গেছে।
তবে কারা কীভাবে তাকে হত্যা করে জাতীয় ঈদগাহের সামনের সড়কে রেখে গেছে, তা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।তবে পুলিশের ধারণা, দু-একদিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে, আশরাফুল হক তিন দিন আগে অসুস্থ বাবাকে রংপুর হাসপাতালে রেখে প্রবাসী বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা যান। এরপর থেকে স্ত্রী লাকী বেগম আশরাফুলকে ফোন করলে জরেজ মিয়া ফোন রিসিভ করতেন। আশরাফুলের খোঁজ করলে তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানাতেন।
এদিকে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকালে ভাইয়ের সঙ্গে বদরগঞ্জ থানায় যান লাকী বেগম। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ঢাকায় স্বামী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে ২টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি ভ্যানে দুই ব্যক্তি এসে ড্রাম দুটি রাস্তার পাশে রেখে যায়। স্থানীয়রা এতটুকু বলতে পারছে। সন্ধ্যার দিকে যখন দুর্গন্ধ ছড়ায় তখন পুলিশকে খবর দিলে ড্রাম খুলে চালের ভেতর থেকে কালো পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত মরদেহ বের করা হয়। আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আশরাফুল হকের শ্যালক আব্দুল মজিদ জানান, আশরাফুল তার বাবাকে রংপুরে একটি হাসপাতালে রেখে গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়া ফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় যান। বুধবার বিকাল ৫টায় আশরাফুল তার স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। তাই তারা আজ বিকালে বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে আসেন। এখানে এসে জানতে পারেন, আশরাফুল হককে ঢাকায় খুন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বুধবার বিকালে আমার বোনের সঙ্গে কথা হয় আশরাফুলের। তখন তিনি বলেছেন, বাবা হাসপাতালে, রিলিজ দেবে, টাকা পয়সা দিছি। বাবাকে বাড়ি নিয়া আইসো। এটাই শেষ কথা। এরপর থেকে আশরাফুলকে কল দিলে তার বন্ধু জরেজ ধরে আর বলে আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।
আব্দুল মজিদ আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আমার বোন আশরাফুলকে ফোন দিলে ফের জরেজ ফোন ধরে। কিন্তু আশরাফুলকে দেয় না। এজন্য বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যান। জরেজের স্ত্রী তাকে ফোন দিলে আশরাফুল ফোন ধরে না কেন জানতে চাইলে জরেজ জানায় আশরাফুলের ফোন ড্রেনে কুড়ায় পাইছে। এরপর বোনসহ থানায় আসি। এসে শুনি তাকে খুন করা হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার হইছে ঢাকায়। এ কথা শোনার পর আমার বোন তো অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়া। তার এমন সন্দেহমূলক আচরণে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, আশরাফুলের বন্ধু কে এই জরেজ মিয়া?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত আশরাফুল হকের বাড়ি আর বন্ধু জরেজ মিয়ার (৪১) বাড়ি পাশাপাশি। গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের আজাদ ইসলামের ছেলে।
দুই মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে বাড়িতে আসেন জরেজ মিয়া। এসেই জাপান যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকা ধার চান বন্ধু আশরাফুলের কাছে। সেই টাকা হাতে পেতেই দুজনে বাসে করে ঢাকায় যান। পরের দিন আশরাফুলের পরিবারের লোকজন ফোন দিলে তার ফোনটি রিসিভ করেন জরেজ মিয়া। তিনি আশরাফুলের পরিবারের লোকজনকে বলেন, আশরাফুল ফোন আমাকে দিয়ে টাকা কালেকশন করতে চট্টগ্রাম গিয়েছে।
এদিকে, আরও জানা গেছে, গোপালপুর ইউনিয়নে মাদ্রাসা করার জন্য কিছু জমিও কিনেছেন জরেজ মিয়া। মাদ্রাসা তৈরি করার জন্য স্থানীয় এক ইটভাটায় ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছেন।
এছাড়াও জরেজ মিয়া এলাকার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর