• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ মিনিট পূর্বে
মোঃ আসাদুজ্জামান
বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৫৮ দুপুর

ভয়াল সিডরের ১৮ বছর; এখনো আতংকে উপকূলবাসী

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

২০০৭ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছিল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সিডর। এর ধ্বংসলীলায় মুহূর্তেই পাল্টে যায় উপকূলীয় জনপদের জীবন। তীব্র ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস পুরো উপকূল বিশেষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলের জেলাগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, পশুপাখি আর অসংখ্য মানুষ। আজ সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের ১৮ বছর পূর্তি।

আজও সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন বরগুনাসহ সমগ্র উপকূলবাসী। এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়াল সিডরের ভয়। যাদের সিডর প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের অনেকেই সাগরে লঘুচাপ হলেই ভীত হয়ে ওঠেন। বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ঘুর্নিঝড় সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মারা যান, নিখোঁজ হয়েছেন ১৫৬ জন। ঝড়ের কবলে মারা পড়ে ৩০ হাজার ৪৯৯টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯টি হাঁস-মুরগি। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১টি পরিবারের সবাই কমবেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪টি পরিবার।

বরগুনায় সিডরের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সদর উপজেলার নলটোনা গ্রাম। এই গ্রামে সিডরের এক বছর আগে থেকেই ছিল না কোনো বেড়িবাঁধ। সিডরের সময় এ জায়গায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। ঝড় থেমে গেলে সেখানে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনও এলাকাটি পানির নিচে তলিয়ে ছিল। লাশ দাফনের জন্য কোনো জায়গাও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লাশগুলো নিয়ে আসা হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ২৯ জনকে ১৯টি কবরে দাফন করা হয়। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে চারটি কবরে তিনজন করে ১২ জন, তিনটি কবরে দুজন করে ৬ জন ও ১২টি কবরে একজন করে ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়। কবরগুলোকে একটু উঁচু করে রাখা হয়।

সিডরের ধংসলীলার ১৮ বছরেও বরগুনায় নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকায় নির্মান করা হয়নি টেকসই বেরিবাঁধ। ফলে ঝড়ের সংকেত পেলেই উপকূলবাসী মৃত্যু আতংকে দিন কাটায়। সিডর-পরবর্তী সময়ে উঁচু টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি উঠলেও সেই দাবি পূরণ হয়নি আজও। প্রতিনিয়ত ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, ভেসে যাচ্ছে মাছের ঘের।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার ২২টি পোল্ডারের আওতায় প্রায় ৮০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটারই নিম্ন উচ্চতার, যা প্রতি বছরই বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকে। সম্প্রতি ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার ১৩ কিলোমিটার বাঁধের তীর সংরক্ষণ, ৯ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ এবং ৫১ কিলোমিটার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান।

বরগুনা সদর উপজেলার নিশানবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন স্ত্রী ও সন্তানকে। সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

তিনি বলেন, ১৭ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের কষ্টের কথা কেউ শুনতে চায় না। বরগুনার মাঝের চরের বাসিন্দা মহসীন আলী বলেন, আমাদের এই চরটি অর্ধেক বরগুনা আর অর্ধেক পাথরঘাটায় অবস্থিত হওয়ায় কোনো উপজেলা থেকেই তেমন কোনো বরাদ্ধ দেওয়া হয় না। সিডরের পর থেকে নানা দুর্যোগে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জোয়ারেই আমাদের চর প্লাবিত হয়। বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস এলে তো কথাই নেই। পরিবেশ কর্মী আরিফ রহমান বলেন, বরগুনার তিন নদীর তীরের মানুষের প্রধান দাবি টেকসই বেড়িবাঁধের। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের আতঙ্কে থাকা মানুষের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধে নির্মানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এখনই পদক্ষেপে নেওয়া দরকার। দীর্ঘদিন ধরে উপকূলের মানুষের টেকসই বেড়িবাঁধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা আজও কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বরগুনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই বরগুনার নদী তীরবর্তী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেক স্থান আছে যেখানে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে পানি বৃদ্ধি হলেই ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়।

আমাদের দাবি হচ্ছে উচু এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে কিন্তু বারবারই আমরা শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারি বরদ্ধ নেই, বরাদ্ধ যা আসে তাও নামে মাত্র। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, বরগুনায় অনেকগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ চলমান রয়েছে এবং অনেক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ন স্থানে টেকসই বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও জোয়ার জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এখানকার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে যে এলাকাগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেখানকার স্থানীয়দের কীভাবে সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়েও কাজ চলমান রয়েছে।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]