বাংলাদেশে আমদানিকৃত মেডিসিনের অবৈধ ডোজ প্রতারনা ও রিপ্যাকিং এর ফলে খামারীর আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানীর ঘটনা দেশবাসীরকে জানানোর জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন প্রান্তিক খামারীরা। মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কর্তৃক এর আমদানিকৃত মেডিসিনের অবৈধ ডোজ প্রতারনা ও রিপ্যাকিং এর ফলে প্রান্তিক পোলট্রি খামারীরা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মোহাম্মদ ইমরুল হাসান লিখিত বক্তব্য দ্বারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রান্তিক পোলট্রি খামারী এবং একটি ইথিক্যাল পোলট্রি খামার পরিচালনা করি যা বাংলাদেশের একমাত্র জিরো এন্টিবায়োটিক ও ফ্রি রেঞ্জ ব্রয়লার ও কালার বার্ড খামার, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্স চ্যালেঞ্জের কথা চিন্তা করে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না, এমনকি রোগের চিকিৎসা হিসেবেও কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় না। আপনারা জানেন বাংলাদেশের ব্রয়লার খামারগুলোতে রোগের চিকিৎসার বাইরেও রোগ প্রতিরোধ ও গ্রোথ বাড়ানোর জন্য প্রচুর এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে বেশি খুঁজে পাওয়া জীবাণু ই- কোলাইয়ের বেলায় পোলট্রি শিল্পে ব্যবহৃত ১২টি অ্যান্টিবায়োটিকের ৮টিই অকার্যকর হয়েছে অন্তত ৪০% এবং অ্যাম্পিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিনের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৯০ শতাংশ। রান্নার দ্বারা সব এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্স ধংস হয় না; হিট স্টাবল এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ রান্নার তাপে/হিটে ধংস হয় না, যা পরবর্তিতে রেজিস্টান্স হয়ে যায়।
আমরা এন্টিবায়োটিকবিহীন ফার্মিং এর জন্য ২০২২ সালের শুরু থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউকিট্যালস লিমিটেড এর পরামর্শক্রমে তাদের ঘোষনাকৃত ডোজ [প্রতি টনে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম নিয়মিত] ফলো করে আমাদের ফিডে সর্বোচ্চ ডোজ প্রতি টনে ৫০০ গ্রাম ব্যবহার করে আসছিলাম। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ব্রয়লারের শরীরে পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি, এবং ব্রয়লার বারবার কক্সিডিউসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং কক্সিডিউসিস এর ফলে সৃষ্ট ক্ষত থেকে অন্যান্য সেকেন্ডারী ইনফেকশন, বিশেষ করে ন্যাক্রোটিক এন্টারটাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মুরগী মারা যেত এবং ওজন কম আসত। স্কয়ার ফার্মার সেলস টিমকে বারবার জানানোর পরেও তারা প্রতি টনে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ডোজকেই এই কক্সিডিউস্টার্টের প্রকৃত ডোজ বলেই আমাদের কনফার্ম করে আসছিল।
গত ২১ মে ২০২৫ তারিখে স্কয়ার ফার্মার সাথে এই বিষয়ে মিটিং করার পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গত ২৩ মে ২০২৫ তারিখে করার ফার্মা তাদের ওয়েব সাইটে পূর্বের প্রতারনাকৃত আন্ডার-ডোজ সরিয়ে ম্যানুফাকচারের আসল ডোজ আপডেট করেন ও কিছু দিন পরে বাজার থেকে অবৈধ রিপ্যাক করা প্লাস্টিক কন্টেইনার সরিয়ে ফেলে। স্কয়ার কর্তৃক তাদের ওয়েবসাইটে ডোজ-আপডেটই প্রমান করে যে স্কয়ার এত দিন অবৈধভাবে প্রতারনা করে আসছিল, যদিও ওয়েবসাইট আপডেট করলেও রিপ্যাকিং করা কন্টেইনারে আন্ডার-ডোজ রয়ে যায়।
কিভাবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর মত স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুজি করে ফার্মাসিউটিক্যালের মত সেনসিটিভ একটি সেক্টরে অন্যায়ভাবে অবৈধ ডোজ প্রতারনা ও রি- প্যাকিং করে দিনের পর দিন দেশ ও খামারীদের ধোকা দিয়ে আসছিল? নিরাপদ খাবার দেশবাসী, আমাদের ও আমাদের সন্তানদের অধিকার, এই অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার এখতিয়ার স্কয়ার ফার্মার নেই। সাংবাদিক ভাইদের কাছে অনুরোধ, আপনারা জাতির বিবেক ও অন্যায়ের সাথে আপোষহীন। আপনারা চাইলে অপরাধী যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারেন। আমরা চাই আপনাদের মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারনা ও অবৈধ কাজ বাংলাদেশে আর যেন না হয়, স্কয়ারের মত অপরাধীরা দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি এবং আমাদের মত ক্ষুদ্র খামারীরা যেন উপযুক্ত ক্ষতিপুরন পায়।
ইতিমধ্যে এই বিষয়ে যে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে সেগুলো হল প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর বরাবর অভিযোগ ও শোকজের কপি, ম্যানুফ্যাকচারার কর্তৃক অরিজিনাল ডোজ কনফার্মেশন ইমেইল এর কপি, স্কয়ার ফার্মা কর্তৃক অনলাইনে ডোজ পরিবর্তন ও রিপ্যাকিং এর প্রমান, প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের অনুরোধে স্কয়ার ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরাবর প্রেরনকৃত ইমেইল এর কপি, তথ্য অধিকার আইনে শোকজের জবাবে স্কয়ার ফার্মার দাখিলকৃত কাগজপত্রের কপির আবেদন
ও জবাব, স্কয়ার কর্মিদের কর্তৃক অনলাইনে হুমকি, ব্যক্তিগত আক্রমনের কপি, স্কয়ার ফার্মা কর্তৃক তৈরি করা হার্ব-অল কক্স এর প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন এর অংশ, প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক স্কয়ার ফার্মাকে ইস্যুকৃত আমদানী ছাড়পত্রের একটি কপি যেখানে রিপ্যাকিং নিষিদ্ধ স্পস্টভাবে উল্লেখ আছে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নিউজের কপি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর