জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তিনজনের প্যানেল এই রায় ঘোষণা করবেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি মূল অভিযোগ:
১. উসকানিমূলক বক্তব্য ও নেতৃত্বের দায় – ১৪ জুলাই ২০২৪ সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি।
২. আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ – হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে দমন নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ।
৩. আবু সাইদ হত্যা – রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা।
৪. চাঁনখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা – পাঁচ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ।
৫. আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা ও লাশ পোড়ানো – ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় ছাত্রদের হত্যার নির্দেশ ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম এবং ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা:
রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করেছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে জমায়েত করতে না পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল যে রায়ই দিক, তা কার্যকর হবে এবং জনগণ তা মেনে নেবে। তিনি আরও বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করার জন্য প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যান চলাচল ও লকডাউন পরিস্থিতি:
আওয়ামী লীগ রায়ের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ঘোষণা করেছে, তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে, সব ধরনের যানবাহন চলবে এবং যোগাযোগব্যবস্থা সচল থাকবে। ফেডারেশন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-মালিকদের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
রায় দেখবে বিশ্ব:
রায় বিশ্বব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এবং ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বড় স্ক্রিনে রায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিন দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা সারা বিশ্বে নজর রাখছে। রায়ের পর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি:
রায়ের দিন রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় অবস্থান করছেন। সড়ক পরিবহন, জনসভা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর