জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে এ রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) ও আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল:
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি ন্যায়সংগত, পক্ষপাতহীন বিচার ব্যবস্থা প্রয়োজন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার কখনো মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী তাদের অবশ্যই তদন্তের আওতায় আনা হবে। তবে মৃত্যুদণ্ড কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও জটিল করে, এটি চূড়ান্তভাবে নিষ্ঠুর ও অমানবিক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার ও রায় ঘোষণার কারণে ন্যায়বিচারের যথাযথ নিশ্চয়তা নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর):
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছে ওএইচসিএইচআর। মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, সংস্থা কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় গুরুত্বপূর্ণ হলেও আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডে বিভিন্ন ন্যায্যতা ও মানবাধিকার মানদণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ।
মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, আশা করা যায়, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলন ও পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নিরাপত্তা খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি):
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছে আইসিজি। সংস্থার বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, এই রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব ‘সুদূরপ্রসারী’। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য আসামিদের দায়বদ্ধতা নিয়ে জনমত স্পষ্ট। তবে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার ও দ্রুত শুনানির কারণে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
থমাস কিন মনে করেন, যতদিন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবেন, ততদিন দলটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেরার পথ সীমিত থাকবে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
অন্যান্য... এর সর্বশেষ খবর