• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৭ মিনিট পূর্বে
খায়রুল আলম রফিক
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৭ রাত

‘কিটক্যাট-চিনির নিম্নমান’: নেসলে বাংলাদেশ ও মেঘনা গ্রুপের প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

নিম্নমানের কিটক্যাট চকলেট বাজারজাতের দায়ে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিপাল আবে বিক্রমা ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামান এবং  ভেজাল ও অনিরাপদ চিনি সরবরাহের অভিযোগে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ বিক্রির দায়ে এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন আলমের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথি সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) কামরুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ পরোয়ানা জারি করেন। দুই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর।

এদিকে নেসলে বাংলাদেশ জানায়, তারা সঠিক প্রক্রিয়ায় আমদানি করা কিট ক্যাট সরবরাহ করে আসছে এবং এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে 'হ্যারেজমেন্ট' হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অন্যদিকে মেঘনা গ্রুপ বলছে, তারা মামলার বিষয়ে কিছুই জানে না।

মামলাকারী নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পরিদর্শনের সময় যেসব পণ্যে সন্দেহ হয় আমরা তা ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করি। মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ রিফাইন সুগার দেখে সন্দেহ হওয়ায় পরীক্ষা করা হয় এবং তা ভেজাল ও অনিরাপদ পাওয়া যায়।"

তিনি আরও বলেন, "বাজার থেকে সংগ্রহ করা কিট ক্যাট পরীক্ষায়ও ভেজাল ও নিম্নমান ধরা পড়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ভিত্তিতেই আদালত আদেশ দিয়েছেন।"

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নেসলে বাংলাদেশের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) দেবব্রত রায় চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সেটা হ্যারেজমেন্ট ছাড়া কিছু নয়। আমরা দুবাই ও ভারত থেকে কিট ক্যাট আমদানি করি। কিট ক্যাট পরীক্ষার বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড এখনও তৈরি হয়নি, তাই নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী মাত্রা পরিমাপ করে আমদানি করি। মামলার পর আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি, কিন্তু মামলাকারী আদালতকে ভুলভাবে বুঝিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিপর্যস্ত।"

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) কাজী মো. মহিউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এগুলো সব ভুয়া।"

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া টিবিএসকে বলেন, ভেজাল ও মানহীন খাদ্যপণ্য বন্ধে প্রতিমাসে প্রায় ১৫০টি স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কোনো পণ্য ভেজাল পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, "কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদকের ঘোষণার সঙ্গে পণ্যের উপাদান মেলে না। এসব ক্ষেত্রে উৎপাদককে সতর্ক করা হয় এবং ৩ থেকে ৬ মাস মানোন্নয়নের সময় দেওয়া হয়। এরপরও উন্নতি না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।"

কী রয়েছে কিটক্যাট চকলেটের বিরুদ্ধে মামলায়?

নিম্নমানের কিটক্যাট চকলেট বাজারজাতের অভিযোগে আগেই একটি মামলা (২০/২০২৫) চলমান রয়েছে। ওই মামলায় কিটক্যাটের আমদানিকারক সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের (৭ মকিম কাটারা, সাখাওয়াত ম্যানশন, চকবাজার, ঢাকা) মালিক মো. মোজাম্মেল হোসাইনকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইনের ২৬, ৩৭, ৩৯, ৪০ এবং ৫৮ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

মামলার তদন্তে নেসলে বাংলাদেশের আমদানিকৃত কিটক্যাট চকলেটের নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় নিম্নমানের প্রমাণ মেলে। ল্যাব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, চকলেটে দুধের কঠিন অংশ (মিল্ক সলিড) থাকার কথা ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বা তার বেশি, কিন্তু পরীক্ষায় পাওয়া গেছে মাত্র ৯.৩১ শতাংশ। একইভাবে দুগ্ধ চর্বির মাত্রা থাকা উচিত ২.৫ থেকে ৩.৫ শতাংশ বা তার বেশি, সেখানে পরীক্ষায় পাওয়া গেছে মাত্র ১.২৩ শতাংশ। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাদ্য পরীক্ষাগার এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্ট দেয়।

রিপোর্টের ভিত্তিতে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোহাং কামরুল হাসান সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার শুনানি শেষে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

নতুন অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এবার নেসলে বাংলাদেশের আমদানিকৃত কিটক্যাট চকলেটের নমুনাতেও মানহীনতা পাওয়া গেছে। গত ১০ নভেম্বর স্বপ্ন এসিআই লজিস্টিকস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্য বিশ্লেষক ইলিয়াছ জাহেদীর কাছে পাঠানো হয়।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিলে তারা জানায়, পণ্যটি বিএসটিআই প্রণীত বিডিএস (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড) মানের আওতায় পড়ে না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিষয়টি বোধগম্য নয়, বাংলাদেশের দেশীয় নামকরা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিডিএস মানের লোগো ব্যবহার করছে। মান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত অন্য একটি দেশের উৎপাদিত পণ্য 'নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩' অনুযায়ী বাজারজাত করার সুযোগ নেই। 

আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২০২৪ অনুযায়ী বিএসটিআই থেকে পরীক্ষণপূর্ব ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। কিন্তু নেসলে বাংলাদেশ বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই দুবাই ও ভারত থেকে কিটক্যাট আমদানি করে বাজারজাত করছে—এ অভিযোগও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জনসাধারণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

বিশ্বজুড়ে বহুল জনপ্রিয় কিটক্যাট প্রথম বাজারে আসে 'রাউনট্রিজ চকলেট ক্রিস্প' নামে। ১৯৮৮ সালে নেসলে (সুইজারল্যান্ড) ব্র্যান্ডটি অধিগ্রহণ করে 'কিটক্যাট' নামে বাজারজাত করে। বিশ্বের সব দেশেই নেসলে কিটক্যাট উৎপাদন করে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপাদন করে হার্শে কোম্পানি।

ফ্রেশ চিনির বিরুদ্ধে মামলায় কী রয়েছে?

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, স্বপ্ন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের মধ্য বাসাবো শাখায় পরিদর্শনের সময় 'ফ্রেশ রিফাইন সুগার' ভেজাল ও অনিরাপদ সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরীক্ষায় চিনিটি মানসম্মত না পাওয়ায় নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর ২৩ ও ২৬ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে নালিশি মামলা করা হয়, যা একই আইনের ৫৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গত ১০ নভেম্বর মধ্য বাসাবো এলাকা থেকে ফ্রেশ চিনির নমুনা সংগ্রহ করেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান। পরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্য বিশ্লেষক ইলিয়াছ জাহেদী স্বাক্ষরিত সনদে জানানো হয়, 'ফ্রেশ রিফাইন সুগার' মানসম্পন্ন নয়।

নমুনা সংগ্রহের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের কপি, ক্যাশ মেমোসহ অন্যান্য তথ্য—বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সরবরাহ করেন। পণ্যের লেভেলে উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীর নাম–ঠিকানাও উল্লেখ ছিল।

নিরাপদ খাদ্য আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কার্যক্রম শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে কামরুল হাসান অভিযোগপত্র দাখিল করেন বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে।

এসএ গ্রুপের গুঁড়া দুধে এক-চতুর্থাংশ প্রোটিন

নিম্নমানের গুঁড়া দুধ বিক্রির অভিযোগে এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন আলমের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। 

সোমবার 'গোয়ালিনী ডেইলি ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার'-এর মামলার শুনানিতে এ পরোয়ানা জারি করেন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথি। ২৪ নভেম্বর মামলার ধার্য তারিখ থাকলেও তিনি আদালতে হাজির হননি।

পণ্যে 'ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার' লেখা থাকলেও পরীক্ষায় নির্ধারিত মানের ন্যূনতম চর্বিও পাওয়া যায়নি। প্রোটিন ৩৪ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে মাত্র ৯.৫ শতাংশ। পরীক্ষাগারে ভয়াবহ জালিয়াতি ও মানহীনতার তথ্য উঠে এসেছে—কোনো উপাদানই নির্ধারিত মানে পাওয়া যায়নি।

ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী, দুগ্ধ চর্বির মান থাকা উচিত ন্যূনতম ৪২ শতাংশ; সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৭.৫৮ শতাংশ। বিডিএস মান অনুযায়ী প্রোটিন ৩৪ শতাংশ থাকার কথা, পাওয়া গেছে মাত্র ৯.৫০ শতাংশ।

এই কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, নমুনা সন্দেহ হলে ৬৫০ টাকা দিয়ে ১ কেজি গোয়ালিনী ডেইলি ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। ২০২৫ সালের ২১ অক্টোবর পাওয়া রিপোর্টে পণ্যটি মানসম্মত নয় বলে সনদ দেওয়া হয়।

মামলাটি গত ৩ নভেম্বর আদালতে আমলে নেওয়া হয়। এজাহারে এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন আলমকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে গোয়ালিনী ডেইলি ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার মোড়কজাত ও বাজারজাত করে আসছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]